বাংলায় এবার ভোটের ময়দানে ছেলের বিরুদ্ধে লড়বেন মা। এটাই ভবিতব্য। এখানে ছেলে সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপি–তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। তবে মা হলেন ফিরোজা বিবি। রাজ্য রাজনীতিতে যাঁর পরিচয় ‘নন্দীগ্রামের মা’ হিসেবে। ফিরোজা বিবির পুত্র শেখ ইমদাদুল ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। সেই থেকেই তিনি ‘শহিদের মা।’ ২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভার উপনির্বাচনে তাঁকেই প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিতেছিলেন তিনি। ২০১১–র ভোটেও নন্দীগ্রাম থেকে তিনি জেতেন। আর সেই জয়ের যে অন্যতম কাণ্ডারী সেই শুভেন্দু অধিকারীই এখন তাঁর বিপক্ষ শিবিরে। তাই ফিরোজা বিবির বক্তব্য, ‘আমার হাজার সন্তানের মধ্যে এক সন্তানের বিরুদ্ধে যদি আমাকে লড়তে হয়ে তাতে আমি রাজি।’
গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুর কলেজ মাঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপি–র পতাকা তুলে নিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছেন তাঁর অনুগামীরাও। কিন্তু তাঁর ‘মা’ রয়ে গিয়েছেন তৃণমূলে। সেই ‘মা’ ফিরোজা বিবি জানান, তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। তবে তিনি এটা মেনে নিয়েছেন যে আসন্ন নির্বাচনে পুত্রসম শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই তাঁকে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে। ফিরোজা বিবির কথায়, ‘কুপুত্র থেকে নিপুত্র ভাল। আমি এক সন্তান হারিয়ে হাজার সন্তান পেয়েছি। তাই এক কুপুত্রের বিরুদ্ধে যদি আমাকে লড়তে হয় তাতে আমি রাজি। আমার অবস্থানে কোনও বদল হবে না।’
তা হলে কি বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের টিকিট ফিরোজা বিবিই পাচ্ছেন? যদিও এ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই ‘নন্দীগ্রামের মা’–এর। তাঁর বক্তব্য, ‘দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। যদি দল মনে করে তবে আমি লড়াই করব। কে সন্তান, কে ভাই, কে ছেলে— এ সব দেখার সময় এখন নেই। আমি দিদির সঙ্গেই ছিলাম, আছি, থাকব।’ বিজেপি–র কাজকর্ম, নেতাদের ভাষা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁর। ফিরোজা বিবি বলছিলেন, ‘ওরা বলছে খেরিয়া হঠাও, দেশ বাঁচাও। আমরা কি খেরিয়া? বিজেপি–র লোকজনই এ সব বলে বেড়াচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভার উপনির্বাচনে ৩৯ হাজার ৪৫৯ ভোটে জয়ী হন ফিরোজা বিবি। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই জয়ের নেপথ্যে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই থেকেই তাঁদের মধ্যে মা–ছেলের সম্পর্ক। মা–ছেলের এই জুটি কামাল দেখায় ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও। যদিও পরে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকেই প্রার্থী করেন মমতা। আর ফিরোজা বিবিকে প্রার্থী করা হয় পাঁশকুড়া পূর্ব আসনে। এবার কি ফের তাঁকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করে শুভেন্দুকে বার্তা দেবে রাজ্যের শাসকদল? যদি তাই হয় তা হলে এবার নির্বাচনে মা–ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী থাকবে বাংলা।