লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে আসন নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়। যদিও গোটা বাংলাজুড়ে ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুলের ঝড়ে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু তারপরও আত্মসমালোচনা থেকে সরে থাকতে চাইছে না জোড়াফুল শিবির। আরও দুটি আসন জেতা যেত বলে মনে করেন তাঁরা। আর সেই দুটি আসন হল—তমলুক এবং কাঁথি। পূর্ব মেদিনীপুরের এই দুটি আসনে জয় না আসায় খামতি চোখে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের। যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ।
এই জেলায় দায়িত্ব নিয়ে পড়েছিলেন কুণাল ঘোষ। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে এখান থেকে সরে যান তিনি। তাঁকে আরও অন্য অনেক দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখানের নেতা–মন্ত্রীদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আসন দুটি জেতানোর জন্য। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি। তমলুক এবং কাঁথি এই দুই লোকসভা কেন্দ্রে হারতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এবার শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে এসে দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন কুণাল ঘোষ। একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি দেখতে এসে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মঞ্চ থেকে বললেন, ‘একে অন্যের দোষ–ত্রুটি দেখতে গিয়ে আমরা খাল কেটে কুমির নিয়ে চলে এসেছি। তার বিচার পরে হবে।’
আরও পড়ুন: তারকেশ্বরে বসতি উচ্ছেদ অভিযানে নামল রেল, বুলডোজার চালিয়ে আশ্রয়হীন করল মানুষকে
এবারের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ হবে অন্যান্যবারের থেকে পৃথক। কারণ এবার এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে দুরমুশ করা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভার উপনির্বাচন ঘাসফুল ঝড়ে পদ্মবনে কাঁটা পড়েছে। এই আবহে মঙ্গলবার তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা শুরু হয়। সেখানে এসে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘২৯টা কেন্দ্রে সবুজ আবির উড়লেও কাঁথি ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তা হল না। সেটা আমাদের আফসোস। শুভেন্দু অধিকারীর সমালোচনা পরে করবো। আগে আমাদের ঘর সামলাতে হবে। ব্যর্থতা খুঁজতে হবে। যদি সবাই বড় নেতা হন তাহলে কেন জেতা পাওয়া গেল না দুটো আসন। কেন এই দুটো আসন জেতা গেল না? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে থাকলেও কেন, কেন, কেন, কেন, এই দু’টো আসন জেতা সম্ভব হল না?’
এবার তমলুক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং কাঁথি থেকে উত্তম বারিক। এই দুটো আসন জেতা যায়নি জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের ঢিলেমির জন্য বলে মনে করছেন নেতৃত্ব। আর সেই কথাটাই বেরিয়ে এসেছে কুণাল ঘোষের বক্তব্যে। কুণাল ঘোষের কথায়, ‘বাকি ২৯টা জায়গা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। কাঁথি–তমলুকও একইরকম সুবিধা পেয়েছে। তাহলে এই দু’টো আসন কেন জেতা গেল না? কিছু কিছু জায়গায় আমাদের ভুল হয়েছে। আমি ঠিক না আপনি ঠিক, এই বিচার করতে গিয়ে আমরা খাল কেটে কুমির ঢেকে এনেছি। এই ইগো রাখলে চলবে না। একুশে জুলাই জনস্রোত করুন। তারপরে দেখবেন পুরো খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়েছে।’ এদিনের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক।