রাজনীতির আঙিনায় কেউ চিরশত্রু নয়। এই কথাটা বলতে শোনা গিয়েছিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের গলায়। তাও যখন ইউপিএ–১ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল বামেরা। এত বছর পর আবার সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হল। তাই ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার মধ্য দিয়ে চিরশত্রু যে কেউ নয় সেটা আরও একবার প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে। এবার প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে আবার তাঁর পুরনো দল কংগ্রেসে ফিরতে চলেছেন। আর কংগ্রেসও তাঁকে সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বার সরকারে ফিরে আসার পরই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
তারপর থেকে শুধু অপেক্ষা করে গিয়েছিলেন যদি সাংসদ–বিধায়ক–মন্ত্রী কিছু হওয়া যায়। কিন্তু সময় কেটে গেলেও বারবার পরিস্থিতি তৈরি হলেও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। তাই এবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের কাজের কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর মিলছে না অভিযোগ তুলে কংগ্রেসে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এই বিষয়ে আজ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সংবাদসংস্থা এএনআই–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও মিল নেই। আমি ভাবলাম যথেষ্ট হয়েছে।’ অনেকে মজা করে বলছেন, ইন্ডিয়া জোটে তো দুটো দলই আছে। সেখানে কেউ কংগ্রেসে ফিরল নাকি তৃণমূল ছাড়ল তাতে আর কি যায় আসে।
আরও পড়ুন: মোদীর রাজ্যে চিপসের প্যাকেটে মরা ব্যাঙ, টের পাওয়া গেল অর্ধেকটা খাওয়ার পরে!
এদিকে ২০১৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন প্রণব পুত্র। তারপর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। আর কংগ্রেস ছাড়ার আগে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আড়াই বছর ধরে আমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছিল আমি তা খুব সুচারুভাবে পালন করেছিলাম। কিন্তু আরও বেশি করে কাজ আমাকে দেওয়া হচ্ছিল না। যে কোনও কারণেই হোক আমি ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলাম নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর দ্বারা। তখন মমতা দিদি আমাকে ডাকে এবং তাঁর দলে যোগ দিতে বলেন। কিন্তু সেখানে যোগ দিয়েও কাজ মেলেনি।’
অন্যদিকে এখন কংগ্রেসের ফল সর্বভারতীয় স্তরে ভাল হয়েছে। তাই সেখানে ফিরে যাওয়া ভাল বলেই মনে করেছেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েও আমি বেশি কাজ পাচ্ছিলাম না। তাদের কাজের সংস্কৃতির সঙ্গে কংগ্রেসের কাজের কোনও মিল নেই। তাই আমার মনে হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে। তারপরই আমি নয়াদিল্লি ফিরে আসি। তখন কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আমাকে পরোক্ষভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি এত নীচে কেন আছি? তারপর কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ তথা বন্ধু, রাহুল গান্ধী আমাকে সক্রিয় হতে বলল। আমি সময় চাইলাম, দু’একদিনের মধ্যে দেখা করব। তখন যদি আমাকে দ্রুত যোগ দিতে বলে আমি তা করব। আমি একেবারে প্রস্তুত কাজ করতে। যদি কংগ্রেস আমাকে মেনে নেয়।’