তাঁদের সঙ্গে আগেও মতবিরোধ ছিল। একই জেলায় একই দল করলেও তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। যেটুকু দেখা গিয়েছিল সেটা শুধুই ফরম্যালিটি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাঁদের মধ্যে প্রবল ছিল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। নির্বাচনের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করলেও পরস্পরের ইগো প্রবলেম এতটাই যে, প্রত্যেকেই নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে মরিয়া। এখানে চারজন ব্যক্তি আছে। এক, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দুই, পার্থপ্রতিম রায়। তিন, উদয়ন গুহ এবং চার, অভিজিৎ দে ভৌমিক। এখানে উদয়ন গুহ এবং অভিজিৎ দে ভৌমিক একটি গোষ্ঠী। আর রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং পার্থ প্রতিম ঘোষ অপর গোষ্ঠী। সেখানে এবার উদয়ন গোষ্ঠী সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীকে। তাতেই সরগরম উত্তরবঙ্গের রাজনীতি।
উদয়ন গুহ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তবে তিনি নাম না করে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়কে বিজেপির লোক বলা থেকে শুরু করে বিশ্বাসঘাতক বলে তোপ দেগেছেন। যার ফলে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য–রাজনীতি। আর এই কাদা ছোড়াছুড়ি সকলের সামনে আসায় আরও তুঙ্গে উঠেছে চর্চা। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দল সুবিধা পেয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উদয়ন গুহ, অভিজিৎ দে ভৌমিকরা শনিবার কোচবিহারের নাটাবাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসভায় কাদা ছোড়াছুড়ি হয়। কারণ এই সভার আগেই হুমকি দিয়েছিল রবি–পার্থ শিবির। ‘ভুলভাল বক্তব্য হলে ছেড়ে কথা বলা হবে না’ বলে লাগাতার ফেসবুক পোস্ট করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘আজকের শপথ হোক সম্প্রীতি এবং সর্বধর্মসমন্বয়ের পরম্পরার’, সাধারণতন্ত্র দিবসে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
তারই পাল্টা জবাব এসেছে উদয়ন–অভিজিৎ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীকে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে এদিন উদয়ন বলেন, ‘কে বলেছে বিজেপি নেই? কয়েকজন বিজেপি নেতা ফেসবুকে লিখেছে দেখলাম, নাটাবাড়ির সভায় উল্টো পাল্টা কিছু বলা হলে তাদের ছেড়ে কথা বলা হবে না। এসব তো বিজেপি ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ লিখতে পারে না।’ সুতরাং নাম না করে রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীকে বিজেপি বলে দাগিয়ে দেওয়া হল। যার পাল্টা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, ‘নাটাবাড়ি বিধানসভার মানুষ তাঁর মনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতেই পারেন। সেটার মানে তিনি বিজেপি নন।’ এই কথা বললেও সংঘাত স্পষ্ট হয়ে গেল।
উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ধীরে ধীরে নিজেদের পায়ের জমি শক্ত করছে। সেখানে এমন গোষ্ঠীকোন্দল ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনে ফাটল ধরাতে পারে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ বলেন, ‘দলের অন্দরে কিছু বিশ্বাসঘাতক ছিল বলেই লোকসভা নির্বাচনে নাটাবাড়ি বিধানসভায় সামান্য ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিধানসভার জন্য যদি কোনও সাংগঠনিক রদবদল করতে হয় সেটা করা হবে।’ তবে সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার কথায়, ‘দলে কিছু গদ্দার ছিল। তারা তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লোকসভায় প্রচার করেনি।’