মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি এবং তৃণমূলের প্রতীক না থাকলে কোনও কর্মসূচিতে দলের নেতা–কর্মীদের না যাওয়ার পরামর্শ দিলেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি।
নন্দীগ্রাম দিবস মঙ্গলবার। তার ঠিক দু’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই পোস্টারে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। আর তাই নিয়ে জেলাজুড়ে চর্চার অন্ত ছিল না। এবার তা প্রকাশ্যে এল বিধায়ক অখিল গিরির কথায়, যিনি অধিকারী পরিবারের বিপরীত মেরুর লোক হিসেবেই পরিচিত।
বিধায়কের মন্তব্যের জেরে সরাসরি শুভেন্দু–অখিল সংঘাত শুরু হয়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ দাদার অনুগামী বলে কোনও পোস্টার পড়লেই সেখানে সদলবলে চলে গেলাম, এই অভ্যাস এবার ত্যাগ করতে হবে। অখিল গিরি এবার তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন।
জমিরক্ষার আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে আগামীকাল ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর সমাবেশ রয়েছে। কিন্তু ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে ওই কর্মসূচি শুভেন্দুর ডাকে হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের পতাকা নেই। তাই ওই কর্মসূচির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের জেলা কো–অর্ডিনেটর অখিল গিরি। তবে কয়েকটি পোস্টার পড়েছে যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহনমন্ত্রীর ছবি দেওয়া রয়েছে। ফলে খানিকটা বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে।
রবিবার তমলুকের নিমতৌড়িতে তমলুক ব্লক তৃণমূল আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অখিল। সেখানে শুভেন্দুর দলহীন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দলে থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও ব্যানার লাগাতে হবে। পতাকা টাঙাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, পতাকা না লাগিয়ে যাঁরা মিটিং–মিছিল করছেন, আমি মনে করি না সেটা দলের অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি। আমি দলের কর্মীদের বিনীত অনুরোধ করব এই সব মিটিং–মিছিলে উপস্থিত না হতে। যাতে বিভ্রান্তি না হয়।’ অখিল গিরির এই কথা সরাসরি শুভেন্দুর কর্মসূচির বিরুদ্ধেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যদিও শুভেন্দুর নাম না করে অখিল বলেন, ‘মন্ত্রী হোক আর দলের নেতা, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগাতে হবে ও দলের পতাকা টাঙাতে হবে। যাতে ওটা দলের অনুষ্ঠান বলে মনে হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে দেখে দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে দেখেই বাংলা। মমতাকে দেখেই আমরা সবাই। তাই মমতাকে বাদ দিয়ে কোনও অনুষ্ঠান হতে পারে না।’ এই কথা বলে তিনি শুভেন্দুর দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিন সরাসরি শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে অখিল পৃথক লাইন টেনে দেন। অখিল বলেন, ‘নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ও তাঁর নির্দেশেই কাউকে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে সেই আন্দোলন করা হয়েছে। কোনও একজন নেতা আন্দোলন করেননি। তবে একজন আমি আমি করছে।’ এই কথা আগে শুভেন্দুও বলেছিলেন। নাম না করে যেন তারই জবাব দিলেন অখিল। যা নিয়ে নন্দীগ্রাম দিবসের আগে তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বাতাবরণ।