এবার দল থেকে বেরিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে চাইছেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে তিনি নাকি ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ করেছেন। যার জন্য উত্তরবঙ্গের নেতাদের নিয়ে বৈঠকের দিন সবাই উপস্থিত থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকী যে প্রশান্ত কিশোরকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়োগ করেছেন তাঁকে নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন তিনি। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, সাংগঠনিক পদ থেকে আগেই সরেছেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। এবার নিজের কার্যালয় থেকে সরিয়ে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। আর তারপর তিনি বলেন, ‘কোনও ঠিকাদারি সংস্থাকে দিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করা যায় না।'
এই মন্তব্য যে প্রশান্ত কিশোরের আই–প্যাক সংস্থাকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে, তা মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সংগঠন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করলে কখনই সংগঠন শক্তিশালী হয় না বলে ক্ষোভ উগড়ে দেন মিহিরবাবু। তাঁর সাফ কথা, দলের সংগঠন চলে নেতা ও কর্মীদের মিলিত সিদ্ধান্তে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মীকে ঠিকাদারি সংস্থার মাইনে দেওয়া লোকেদের নির্দেশ মেনে কাজ করতে হবে? এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের এই বিধায়ক। আসলে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে বলেই তিনি এখন এইসব কথা বলছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এইসব মন্তব্য যখন বিতর্ক তৈরি করেছে তখন কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানারে লেখা হয়, কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর কার্যালয়। এই কার্যালয়ের ভেতরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী ছবি সরিয়ে সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীদের ছবি লাগানো হয়েছে। সেখানেই কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মী এবং একাংশ নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করেন বিধায়ক। এমনকী তিনি বিজেপি’র সহ–সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলেও সূত্রের খবর। যদিও এই কথা কেউ স্বীকার করেননি।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৩ তারিখে দলের সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেন কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের এই বিধায়ক। সম্প্রতি অভিষেক ব্যানার্জি ও প্রশান্ত কিশোর শিলিগুড়িতে এসে কোচবিহারের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করলেও সেই বৈঠকে যোগ দেননি মিহির গোস্বামী। সাংবাদিকদের তিনি জানান, তিনি এখনও বিধায়ক রয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে তার কাছে কর্মীরা আসেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তবে কোনও সাংগঠনিক আলোচনা করা হয়নি। কারণ, তিনি সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে আগেই পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি জানান, মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ১৮ অক্টোবর বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে তিনি যাবেন কি না তার সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।
তাঁর সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সম্পর্ক ভাল নয়। জেলা সংগঠনে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই ক্ষোভ রয়েছে তাঁর। তাই দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে দলে থেকে সিঁদ কাটতে চাইছেন মিহির গোস্বামী। মিহির গোস্বামীর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। দলবদল করলে তাঁরাও গেরুয়া পতাকা ধরবেন। সেই বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে কবে তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি। পুজোর পর নভেম্বর মাসে না হলে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে খবর মিলেছে।