তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। ১৯১১ সালে তৈরি হয়েছিল বজবজ পাবলিক লাইব্রেরি। ৪ নম্বর রেলগেটের কাছে তা গড়ে ওঠে। দড়মার বেড়া আর টালির ছাউনি দিয়ে তা গড়ে ওঠে। তৎকালীন সময়ে এই গ্রন্থাগার তৈরি করার উদ্যোগ নেন নন্দলাল ঘোষ, বেনু গঙ্গোপাধ্যায়, রাজকুমার চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, মৃণাল সেন, মিলন মিত্র, লেখক শৈলেন মিত্র এবং বঙ্কিম ঘোড়ুইয়ের মতো মানুষজনেরা। প্রত্যেকেই নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে এবং প্রতিবেশীদের থেকে চাঁদা তুলে গ্রন্থাগার তৈরি করেছিলেন। এই ঐতিহ্যশালী লাইব্রেরি ভেঙে পড়েছিল। তাই এলাকার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যোগাযোগ করা হয়। এলাকার মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে সংস্কার করে দিলেন তিনি। যা নিয়ে খুশি বইপ্রেমীরা।
এই বজবজ পাবলিক লাইব্রেরির বয়স এখন ১১৩ বছর। যা পরে নিজস্ব জমি কিনে দোতলা পাকা বাড়িতে চলে যায় গ্রন্থাগার। কিন্ত উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে গ্রন্থাগারের ভবন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ত। রঙ না হওয়ায় দীর্ঘদিন ভগ্নপ্রায় চেহারা নিয়েছিল। দেওয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়তে থাকে। তার জেরে লোহার জং ধরা রড বেরিয়ে থাকতে দেখা যায়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে। তাতে ভিতরে থাকা একাধিক দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় এলাকাবাসী উপায় না দেখে যোগাযোগ করেন অভিষেকের সঙ্গে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হল না।
একদা এই বজবজ পাবলিক লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক ছিলেন বজবজ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্তর বাবা প্রয়াত নৃপেন দাশগুপ্ত। গৌতমবাবু বাবার তিনটি আলমারি–সহ এক হাজার বই গ্রন্থাগারে দান করেছেন। সুতরাং বই আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এখন বইয়ের সংখ্যা কুড়ি হাজার। কিন্ত সংস্কার হচ্ছিল না বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল বইগুলি। তাই এই গ্রন্থাগারের সংস্কার করার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করা হয়। তিনি তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে এই গ্রন্থাগার সংস্কারের জন্য বজবজ পুরসভাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘একটা লাইব্রেরি তৈরি করা হবে’, শৈলেন মান্নার নামে রাস্তা উদ্বোধন করে ঘোষণা মমতার
এখন গ্রন্থাগার সংস্কার করার কাজ শুরু হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বজবজ পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেছেন। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে সূত্রের খবর। এই গ্রন্থাগারের সম্পাদক গৌতম খাঁড়া বলেন, ‘১৯৫৭ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় গ্রন্থাগারের ভবন দোতলা করতে অর্থ সাহায্য করেছিলেন। ২৫ বছর আগে বিধায়ক অশোক দেব সংস্কার করতে অর্থ দিয়েছেন। এবার সাংসদ তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সমস্ত অসুবিধা দূর হল।’ আর এক্স হ্যান্ডেলে এক ডাকে অভিষেকের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘এই উদ্যোগ নিয়ে বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষা করা হয়েছে। যা প্রশংসনীয়। সাংসদ তহবিলের সাহায্যে ঐতিহ্যশালী বজবজ পাবলিক লাইব্রেরি রক্ষা করা হল নতুন প্রজন্মের জন্য।’