একদিকে বাংলাদেশি জাহাজের বাড়বাড়ন্ত এবং অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের অনীহা, এই দুইয়ের কারণেই আগামী দিনে বড়সড় বিপদে পড়তে পারে সুন্দরবন! লোকসভায় দাঁড়িয়ে এমনই আশঙ্কার কথা শোনালেন সুন্দর লাগোয়া জয়নগরের সাংসদ তথা তৃণমূল নেত্রী প্রতিমা মণ্ডল। পাশাপাশি, সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রকে অবিলম্বে পদক্ষেপ করারও আবেদন জানান তিনি।
প্রতিমার অভিযোগ:
চলতি সপ্তাহ থেকেই সংসদে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। মঙ্গলবার সেই অধিবেশন চলাকালীনই লোকসভায় নিজের বক্তব্য পেশ করেন প্রতিমা। তিনি জানান -
সুন্দরবন লাগোয়া বঙ্গোপসাগর দিয়েই বাংলাদেশের ভারী পণ্যবাহী জাহাজগুলি চলাচল করে। প্রতিদিন অন্তত ১০০টি জাহাদ ওই জলপথ ব্যবহার করে। এবং, এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। ফলত জাহাজ চলাচল আরও বাড়ছে।
এই জাহাজ চলাচলের ফলে সমুদ্রে বিরাট বিরাট তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। যেগুলি সরাসরি সুন্দরবনের বাঁধগুলিতে এসে ধাক্কা মারে। এর ফলে মাটির তৈরি বাঁধগুলি ক্রমশ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। ফলে বিপদ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে কোনও সময় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকার এই বাঁধগুলি সারানোর চেষ্টা করলেও তাতে সমস্যার আশু সমাধান হচ্ছে না। কারণ, এক্ষেত্রে স্থায়ী ও দৃঢ় বাঁধ নির্মাণ করা দরকার। তার জন্য দরকার অনেক টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার সরকারের সঙ্গে বঞ্চনা করছে। তারা বাংলার প্রাপ্য বকেয়া মেটাচ্ছে না। ফলত, নদী বাঁধ সংস্কারের কাজও ঠিক মতো করা যাচ্ছে না।
প্রতিমার দাবি:
এই গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন প্রতিমা। তাঁর আবেদন, সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিয়ম চালু করা হোক। যাতে বাঁধগুলিকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
একইসঙ্গে প্রতিমার দাবি, বঞ্চনা বন্ধ করে কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে সুন্দরবনের বাঁধগুলি মেরামত করার জন্য টাকা বরাদ্দ করুক।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবন শুধুমাত্র দেখতেই সুন্দর নয়। এর গুরুত্বও মারাত্মক। বঙ্গোপসাগরে যখনই কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, তার একটা অংশ সবার প্রথমে আছড়ে পড়ে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উপর। ফলত, প্রকৃতির রোষ থেকে বেঁচে যায় অন্য়ান্য অঞ্চল। কিন্তু, সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লা যে ভয়ঙ্কর ক্ষতি করেছিল, সেই ধাক্কা আজও পুরোপুরি সামনে উঠতে পারেনি সুন্দরবন। তারই মধ্য়ে আমফান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় ফের আছড়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, যখনই কোনও বিপর্যয় আসে, কিছু দিন তা নিয়ে খুব মাতামাতি হয়। তারপর আর কেউ তাঁদের খোঁজ নেয় না। ফলে, আশঙ্কা আর আতঙ্কের মধ্যেই দিন গুজরান করতে বাধ্য হন তাঁরা।