নির্দল প্রার্থী হিসাবে পুর নির্বাচনে দাঁড়ানোয় ও নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করার অভিযোগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২০ জন নেতানেত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। এদের মধ্যে ১৫ জন নির্দল প্রার্থী হিসাবে জেলার বিভিন্ন পুরসভা থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বুধবার তাদের বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে দলের জেলা নেতৃত্ব।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন, খড়্গপুর শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি অসিত পাল (ছোটকা) এবং ক্ষীরপাই শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ৪ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মনোজ হালদার। অন্যদিকে, বহিষ্কৃত ২০ জন নেতা-নেত্রীর মধ্যে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের নেতা-নেত্রী ১৬ জন এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার মাত্র ৪ জন।
বুধবার দুপুরে জেলাসদর মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সভাগৃহ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন পৌরসভা নির্বাচনের দুই কো-অর্ডিনেটর মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া ও বিধায়ক অজিত মাইতি। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও দুই চেয়ারম্যান সুজয় হাজরা, আশিস হুদাইত, দীনেন রায় (বিধায়ক ও এমকেডিএ চেয়ারম্যান), অমল পন্ডা এবং রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ (প্রাক্তন বিধায়ক)।
বহিষ্কৃত নেতা-নেত্রীদের মধ্যে, খড়্গপুর পৌরসভার যাঁরা, তাঁরা হলেন রিনা শেঠ, জগদম্বা গুপ্তা, তপন প্রধান, সুমিতা দাস, জয়া পাল। এর মধ্যে, তপন, জগদম্বা, সুমিতারা তৃণমূল ছেড়েই কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। রিনা শেঠও একইভাবে সিপিআই প্রার্থী হয়েছেন। তবে জহর পালের বউমা জয়া পাল ‘নির্দল’ হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন ৩৫ নং ওয়ার্ডে। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং শাস্তি স্বরূপ ওই পরিবারেরই সদস্য জহর পালের ছেলে অসিত পাল (ছোটকা)-কে শহর যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জহর পাল যেহেতু ৩৩ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তাই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়নি।
তিনি নিজেও জানিয়েছিলেন, ‘যিনি নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। আমি এই বিষয়ে কিছু জানিনা!’ সেজন্যই, হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও এযাত্রায় ছাড় পেলেন প্রবীণ নেতা জহর পাল! এমনটাই মনে করা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, মেদিনীপুর পৌরসভার যাঁরা বহিষ্কৃত হলেন সৌরভ বিষই (১১ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী); ডাঃ এরশাদ আলি (১৩ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী); বিশ্বেশ্বর নায়েক এবং তাঁর স্ত্রী অর্পিতা রায় নায়েক (১৪ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী); সোমা মাইতি (২০ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী) ও তাঁর শ্বশুর মশাই হিমাংশু মাইতি; কংগ্রেস প্রার্থী অঞ্জলি চৌধুরী ও স্বামী স্বপন চৌধুরী; নির্দল প্রার্থী অঞ্জনা রায় এবং নির্দল প্রার্থী মানস দাস। এক্ষেত্রে, মানস দাসের বাবা প্রয়াত মণিলাল দাসকেও বহিষ্কৃত নেতার তালিকায় রাখা হয়েছে!
অন্যদিকে, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার ক্ষীরপাই পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সুনীতি হালদার ও তাঁর ছেলে মনোজ হালদারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব থেকেও সরানো হয়েছে মনোজকে। এছাড়াও, যথাক্রমে চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী ওসমান গনি এবং রামজীবনপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অসিত সরকার-কেও বহিষ্কার করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দ।