ভোটের আগেই গোর্খ্যাল্যান্ড ইস্যুতে ফয়সলা হোক, চায় পাহাড়ের দলগুলি। সেখানে ফের Gorkhaland Territorial Administration (GTA)-র বৈঠক ডাকায় ক্ষুব্ধ তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিটিএ-র সদস্যরা। যাবে না জিজেএমের দুই গোষ্ঠীও।
জিটিএ-র শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৫ সালে যখন বিমল গুরুংয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল সেটি। তারপর থেকে পাহাড়ের রাজনীতি অনেকটা বদলেছে। এখন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গুরুং। কিছুটা ছন্নছাড়া নেতৃত্ব। কিন্তু ভোট আসতেই বিজেপির ওপর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার চাপ বাড়াচ্ছে জিজেএম ও জিএনএলএফ। প্রসঙ্গত গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত তিনটি ভোটে পাহাড়ের দলের সমর্থন নিয়ে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে বৈতরনী পার করেছে বিজেপি। তবে ধীরে ধীরে সমতলে বেড়েছে বিজেপির প্রভাব। গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পায় বিজেপি। তারপর থেকে সম্ভাব্য গোর্খাল্যান্ড নিয়ে রা-কাটতে দেখা যায় নি বিজেপি নেতৃত্বকে।
তাতেই ক্ষুব্ধ পাহাড়ের দলগুলি। জনমুক্তি মোর্চার গুরুং গোষ্ঠী ও জিএনএলএফের নেতারা গত মাসের ২২ তারিখ অমিত শাহ ও ২৯ তারিখ কৈলাশ বিজয়বর্গীর সঙ্গে দেখা করেন। ভোটের আগেই পাহাড় ইস্যুর স্থায়ী সমাধান করার দাবি করেন তাঁরা।
শাহ তখন তাদের বলেন দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র, রাজ্য ও পাহাড়ের দলগুলি নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। তারপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ২৭ জুলাই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় যে স্বরাষ্ট্রসচিব জিটিএ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে পর্যালোচনা করবেন ৭ অগস্ট। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব, জেলাশাসক, জিটিএ প্রতিনিধি ও জিজেএম-এর প্রতিনিধিরা।
বর্তমান জিটিএ-র সদস্যদের নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে জিজেএম-এর কোন গোষ্ঠীকে ডাকা হবে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি, সেই নিয়েও আপত্তি উঠেছে। গুরুং গোষ্ঠীর নেতা রোশন গিরি বলেছেন যে তারা এই বৈঠকে যাবেন না। পাঁচ বছর পর এই বৈঠকের কী মানে আছে সেই প্রশ্ন করেন গিরি। গুরুং গোষ্ঠী মনে করছে এই বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নিচ্ছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত,২০১৭ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জিজেএমকে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নিতে বলেন ও তিনি বৈঠক ডাকার কথা জানান। সেই বৈঠক কোনও দিন হয়নি। এরপর ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত বিমল গুরুং ও রোশন গিরি গা-ঢাকা দেন। তাঁর রাজনৈতিক বিরোধী বিনয় তামাংকে জিটিএ-র মাথায় বসান মমতা।
বিজেপির দার্জিলিং সাংসদ রাজু বিস্তা পুরো বিষয়টি নিয়ে সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে অমিত শাহকে জানিয়েছেন যে অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছে জিটিএ। দ্রুত জিজেএম ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত বলে তিনি জানান।
জিএনএলএফ-এর দার্জিলিং শাখার প্রধান অজয় এডওয়ার্ডস বলেন যে যারা এই বৈঠকে যাবেন, তাঁরা গোর্খাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। বিজেপিকে দ্রুত নিজেদের অবস্থান সাফ করতে দাবি জানান তিনি।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই চাপে জিটিএ-র সদস্যরা। শুক্রবার জিটিএ-র প্রধান বিনয় তামাং ও জিজেএম-র অন্য গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অনিল থাপা জানিয়ে দিয়েছেন তারা এই বৈঠকে যাবেন না।
পুরো ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ রাজ্য সরকারের। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন যে এই নিয়ে কিছু বলব না। আদৌ ৭ তারিখের বৈঠক হবে কিনা, সেই নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।