তিনদিন কেটে গেল। উত্তরাখণ্ডে প্রলয়ের পর এই রাজ্যের ৬ জন এখনও নিখোঁজ। এই রাজ্য থেকে তাঁরা উত্তরাখণ্ডে কাজ করতে গিয়েছিলেন। রাজ্যের তিন জেলা থেকে তাঁরা কাজ করতে গিয়েছিলেন তপোবন বিদ্যুৎ প্রকল্পে। ২.৫ কিলোমিটারের টানেলে ঢুকতে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলকে। কারণ টানেলের মুখে আটকে রয়েছে বড় বড় পাথর ও কাদা। এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেলেও এই বাঁধ প্রকল্পের এলাকায় খোঁজ করা হচ্ছে ১৭৫ জনের।
উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ধসের পর তৃতীয় দিনেও জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। ইন্দো–টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং অন্যান্য সংস্থা একজোট হয়ে দুর্গম তপোবন টানেলের মধ্যে ঢুকে আটকে পড়াদের বের করার আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দুই ছেলে লালু–বুলুর সঙ্গে রবিবার শেষবারের মতো কথা হয়েছিল ধ্রুবগোপাল জানার। এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা ধ্রুবগোপাল জানা বলেন, ‘রবিবারের পর আর কোনও খবর নেই। আমরা কিছুই জানি না। প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এছাড়া আর কিছুই আমরা জানি না।’
উদ্বেগ–উৎকন্ঠার মধ্যে কাটছে এই রাজ্যের পরিবারগুলির। যাঁদের বাড়ির সদস্যরা উত্তরাখণ্ডে রয়েছেন। অথচ মিলছে না কোনও খবর। জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের তিন ছেলেকে এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। লালু জানা, বুলু জানা এবং সুদীপ গুড়িয়া। আবার পুরুলিয়ার আড়ষা গ্রামের দু’জনেরও কোনও খোঁজ নেই। নাম—শুভঙ্কর তন্তুবাই ও অশ্বিনী তন্তুবাই। অশ্বিনীর ভাই সহদেব জানান, উৎকন্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন অশ্বিনীর স্ত্রী। রবিবারই শেষ কথা হয়েছিল। ঠিকাদারের কাছ থেকে কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। অশ্বিনী তাঁর স্ত্রী ও এক বছরের সন্তানকে রেখে কাজে গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার শুভঙ্কর ও অশ্বিনীর পরিবার উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গ্রামের স্থানীয় মন্দিরে একটি যজ্ঞ করা হয়েছে তাঁদের নিরাপদে ফেরার জন্য। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতাও তাঁদের সঙ্গে রওনা হয়েছেন দেবভূমিতে। এর মধ্যেই খবর মিলেছে মালদহ জেলার অনেশ শেখ এখনও নিখোঁজ। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর অনেশের দুই ভাই হিমাচল প্রদেশ থেকে উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তাঁরা সেখানে কাজ করেন।
উল্লেখ্য, তবে শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ১২০ মিটার ভেতরে ঢুকতে সফল হয়েছে উদ্ধারকারী দল। টানেলের ভেতর অক্সিজেনের অভাব অনুভূত হচ্ছে। চামোলি জেলার আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ওই টানেল থেকে যত দ্রুত সম্ভব ধসের কবলে পড়া মানুষগুলিকে বের করে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চামোলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ১৩টি গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ভারত–চিন সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রামগুলি নদীর উপরের সেতুর মাধ্যমে চামোলি জেলার মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত। কিন্তু হিমবাহ ধসে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে সেই সেতু।