করোনার লকডাউনে বাজারে ভিড় কমছে না। উলটো দিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফতোয়া। জেলায় জেলায় ফতোয়ার জেরে বাড়িতে ফিরতে পারছেন না হাসপাতালের কর্মীরা। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ছবিটা কমবেশি একই রকম।
মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সম্প্রতি ভর্তি হন এক রোগী। কয়েকদিন চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে ওড়িশায় নিয়ে যান আত্মীয়রা। এর পর জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত। সেই খবর মেদিনীপুর শহরে ছড়াতেই ফতোয়া জারি করেন স্থানীয়রা। জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই হাসপাতালের কর্মীদের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে না। ফলে হাসপাতালেই রাত কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।
এখানেই শেষ নয়, ওই কর্মীদের পরিবারকেও এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী ওই হাসপাতালের এক কর্মীর ভাই দুগ্ধ ব্যবসায়ী। তাঁকে দুধ দিতে বারণ করে দিয়েছেন শহরের বহু মানুষ।
একই রকম খবর মিলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও। জেলার ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকার লালবাটি গ্রামের ৩ বাসিন্দা মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। সপ্তাহে ১ দিন বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সম্প্রতি গ্রামের লোকজন তাদের ফোনে জানায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামে ফেরার দরকার নেই। ছুটির দিনটাও যেন কলকাতাতেই কাটায় তারা। হাসপাতালের ওই কর্মীদের অভিযোগ, ফিট সার্টিফিকেট থাকলেও তাদের বাড়িতে ফিরতে দিচ্ছেন না গ্রামবাসীরা।
এমনকী কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইআটিতে সেরিব্রাল স্ট্রোকের এক রোগীকে প্রতিবেশীরা এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরতে বাধা দেন বলে অভিযোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে কেউ ফিরলেই করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ভাবা ভুল। কারণ হাসপাতালের কর্মীদের ওপর অনেক বেশি নজর রাখা হয়। ফলে অসুস্থতার সামান্য লক্ষণ দেখা গেলেই তাঁদের পরীক্ষা হয়। কোনও কারণে হাসপাতালের কোনও কর্মীর সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে তাঁকে কোয়ারেনটাইনে পাঠানোর দায় রোগীর থেকে বেশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকজন ডাক্তারবাবু ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ঠিকই, তবে উপযুক্ত নজরদারির জন্য তাঁদের থেকে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেই প্রমাণ পাওয়া যায়নি।