রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেই শান্তিনিকেতনকে চিনেছিল গোটা বিশ্ব। ইতিমধ্যে ইউনেস্কো থেকে হেরিটেজ তকমা মিলেছে। কিন্তু সেই তকমা পাওয়ার পর যে ফলক শান্তিকেতনে বসেছে, তাতে নেই কবিগুরুর নাম! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্কে তৈরি হয়েছে। এবার এই বিতর্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তিনিই। তাই তাঁকে চিঠি লিখে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। আর এই চিঠি পাঠানোর ঘটনায় সরগরম হয়ে উঠেছে বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণ।
এদিকে কয়েকদিন ধরেই এই বিতর্কে তপ্ত হয়ে রয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ এখানে বসানো তিনটি ফলকে আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী এবং উপাচার্য হিসাবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম থাকলেও নেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। অথচ শান্তিনিকেতন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত। যেখানে নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতার স্কুল চালিয়ে এসেছেন এবং ১৯২১ সালে গড়ে তোলেন বিশ্বভারতী। যা আজ এই রাজ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে এই ফলকে কবিগুরুর নাম না রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে ইমেল করা হয়েছে।
অন্যদিকে শান্তিনিকেতনের ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ফলকে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে আচার্য প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই বিষয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য চিঠিতে লেখেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আপনার অফিস থেকে গুরুদেবের নাম বাদ দিয়ে কোনও ফলক আসেনি। আর তাতে অনুমতিও দেওয়া হয়নি। আপনি নিজেও এমন অনুমতি দেবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’ ইমেলে এই কথাগুলিই তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি আবার রাষ্ট্রপতি, বাংলার রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকেও পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের ‘দুর্গারত্ন’ প্রত্যাখ্যান টালা প্রত্যয়ের, কল্যাণীর পথেই হাঁটল কলকাতা
ঠিক কী লেখা আছে চিঠিতে? গত ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের ইউনেস্কোর সমাবেশ থেকে বিশ্বকবির শান্তিনিকেতনকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’–এর তকমা দেওয়া হয়। আর এই ঘোষণার পরে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দনে ভেসেছিল ইউনেস্কোর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল। তবে কবিগুরুর নাম না থাকা নিয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘এই ফলক দেখে সাধারণ মানুষ মনে করবেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এই কাজ করেছে আচার্য নরেন্দ্র মোদীর সবুজ সংকেতে। ইতিমধ্যেই রাজ্যসভার সাংসদ জওহর সরকার এবং জয়রাম রমেশ দুটি টুইট করেছেন। যা আপনার বিরুদ্ধে। এই গোটা বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজের ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন করেছেন। আর বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতাকে তিনি এবং আপনি অপমান করেছেন। তাই আপনাকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি।’