কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি আটকাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আর তপসিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হওয়ায় অপমানজনক মন্তব্য পর্যন্ত করা হয়েছে। পর পর দুটি অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী–সহ চারজনের বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানায় এফআইআর দায়ের করলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক অফিসার। এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাতে অনেকেই হতবাক। তার মধ্যে এমন অভিযোগ তুলে থানায় এফআইআর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শান্তিনিকেতন থানা সূত্রে খবর, ওই অফিসারের নাম প্রশান্ত মেশরাম। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে ছিলেন। এখন তিনি লিয়েন নিয়ে ওড়িশার কোরাপুট কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশন (পরীক্ষা নিয়ামক) পদে নিযুক্ত হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়,পদোন্নতি আটকাতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং অপদস্থ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। জল অনেক দূর গড়াতে থাকলে প্রশান্ত মেশরাম জাতীয় তপসিলি জাতি কমিশনে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু সেখান থেকে পদক্ষেপ করতে সময় লাগছিল। তাই শান্তিনিকেতন থানায় এফআইআর করেন তিনি বলে খবর।
ঠিক কী অভিযোগ উঠেছে? এদিকে প্রশান্ত মেশরাম অভিযোগ করেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছুতেই লিয়েন–সহ ছাড় দিচ্ছিল না। বরং টালবাহানা করে আটকে রাখা হচ্ছিল। আবার পুরনো অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসে অপদস্থ করা শুরু হয়েছিল। জাতীয় তপসিলি জাতি কমিশন অভিযোগ পেয়ে উপাচার্য এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব সঞ্জয় ঘোষকে তলব করেছিল কমিশন। নয়াদিল্লিতে গিয়ে কমিশনের দফতরে দেখাও করেন। তারপর কমিশনের নির্দেশে প্রশান্ত মেশরামকে বিশ্বভারতী ছেড়ে দেয়। তবে পিছন থেকে তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদের পর বনগাঁয় খুন, গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে, এলাকায় আতঙ্ক
কাদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ? এই পদোন্নতি আটকাতে চারজন একসঙ্গে কাজ করেছিল বলে প্রশান্ত মেশরামের অভিযোগ। এই চারজন হলেন—উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি রেজিস্ট্রার তন্ময় নাগ, ইন্টার্নাল অডিট অফিসার প্রশান্ত ঘোষ। এরা সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলেই অভিযোগ। শান্তিনিকেতন থানায় তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ২৬ জুন একটি প্রশাসনিক বৈঠক হয়। সেখানে জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার জন্য উপচার্য তাঁকে গালিগালাজ এবং অশ্লীল মন্তব্য করেন। এমনকী জাতপাত তুলে অপমান করা হতো। এই সম্প্রদায়ের মানুষজন যাতে অফিসে ঢুকতে না পারেন তার জন্য আপ্ত সহায়ককে নির্দেশ দিয়ে রাখতেন উপাচার্য। তাঁকে ফোন করতেও নিষেধ করতেন।