একটা সময় ছিল উত্তরবঙ্গের চা বলয় মানেই ছিল কার্যত লাল পতাকায় মোড়া। গেট মিটিং লেগেই থাকত। সেখানে বক্তব্য রাখতেন পোড়খাওয়া সিপিএম নেতারা। তবে সেসব এখন অতীত। এবার ভোটের আগে ডুয়ার্সের একাধিক চা বাগানে গিয়ে দেখা গিয়েছে যে পতপত করে উড়ছে ঘাসফুলের পতাকা। চা শ্রমিকদের মধ্য়ে সংগঠন জোরদার করতে সবরকম উদ্য়োগ নিয়েছে তৃণমূল। তবে এক্ষেত্রে চা শ্রমিকদের মন পেতে আইএনটিটিইউসিকে সবথেকে সহায়তা করেছে একাধিক সরকারি প্রকল্প।
তবে শুধু তৃণমূলই নয়, চা শ্রমিকদের মন জয়ে বিজেপিও চেষ্টার কোনও কসুর করেনি। এদিকে চা বলয়ের অন্যতম আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে এবারও জিতেছে বিজেপি। তবে দুটি কেন্দ্রেই জয়ের ব্যবধান কমেছে। আর সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের মালবাজার আর আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের নাগরাকাটা এই দুটি জায়গায় রয়েছে একাধিক চা বাগান। আর এখানকার ভোট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন চা শ্রমিকরা। আর সেখানে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে বিজেপির থেকে। আর আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের অপর চা বাগান অধ্য়ুষিত এলাকা মাদারিহাট ও কালচিনিতে তৃণমূলের থেকে বিজেপি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে যতটা ব্যবধান তৈরি করতে পেরেছিল ততটা নয়। এটাই বিজেপির কাছে চিন্তার বড় কারণ।
কারণ চা বলয়ে সংগঠন যদি ধস নামে তাহলে বিরাট সমস্য়ায় পড়তে পারে বিজেপি। আর ইতিহাস বলছে চা শ্রমিকরা একবার পাশ থেকে সরে গেলে তাদের ফের সেই পতাকার নীচে ফেরানো বেশ কষ্টকর। সেক্ষেত্রে বিজেপি শেষ পর্যন্ত এই কাজ কতটা করতে পারবে সেটাই দেখার।
চা সুন্দরী প্রকল্প, চা শ্রমিকদের রেশন, চা সুন্দরী এক্সটেনশন সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের জেরে চা বলয়ে খুব দ্রুত সংগঠন করতে পেরেছে তৃণমূল। অন্যদিকে বিজেপিও ধাপে ধাপে নানা বঞ্চনাকে সামনে রেখে সংগঠনকে মজবুত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এবারের ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে ধস নামছে বিজেপির ভোটে। সেক্ষেত্রে এই পরিস্থিতিতে এখন ভরসা বলতে আরএসএস। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। কিন্তু প্রকাশ্যে এনিয়ে বিজেপি নেতারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে এক্ষেত্রে একাধিক সমস্যাও রয়েছে। আরএসএস মূলত সামাজিক সংগঠন বলে নিজেদের দাবি করে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের পতাকার বিরুদ্ধে তারা কতটা চা শ্রমিকদের মধ্য়ে প্রভাব ফেলতে পারবে সেটাও দেখার। তবে চা বলয়ে কেন ভোট কমল তা নিয়ে নানা হিসেব নিকেশ করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের মাথায় রয়েছেন জন বার্লা। তিনি এবার ভোটে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সেক্ষেত্রে তাঁর সংগঠন এবার কতটা মাঠে নেমেছিল সেটাও দেখার।