দু’বেলা দু’মুঠো জোটে না, পরনের নতুন কাপড় তো দূরের কথা। তাঁদের কথা ভেবে দেশ–বিদেশে অনেকেই গড়ে তুলেছেন মানবতার দেওয়াল। ব্যবহার করা পুরনো জামাকাপড় সে সব দেওয়ালে টাঙিয়ে দেন অনেকে, আর যাঁরা সর্বহারা, গৃহহীন তাঁদের কেউ সেগুলি নিয়ে যান পরবেন বলে। কলকাতা শহরেই বহু জায়গায় এখনও এমন নিদর্শন রয়েছে। এবার করোনা আবহে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে ফিরল সেই দেওয়াল, যাতে থাকে শুধু মানবিকতার রঙ।
কোচবিহার দিনহাটার নিগমনগর নিগমানন্দ সারস্বত বিদ্যালয় যে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা তারই এক অংশে প্রতিদিন ২০টি খাবারের প্যাকেট ঝুলিয়ে রাখছেন স্কুলের প্রাক্তনীরা। দেওয়ালে লেখা, ‘এখান থেকে আপনার যা দরকার নিয়ে যান।’ রয়েছে অনুরোধ, ‘দরকারে নিন। কিন্তু একটি।’ এর প্রধান উদ্যোক্তা ও স্কুলের টিচার ইনচার্জ অনির্বাণ নাগ বলছিলেন, ‘অদ্ভুতভাবে, যার যতই অভাব থাকুক না কেন, একটির বেশি খাবারের প্যাকেট কেউই নিচ্ছে না।’
কী থাকছে ওই খাবারের প্যাকেটে? চারজনের পরিবারের মোটামুটি ২ দিনের খাবার রাখা রয়েছে তাতে। কোনওদিন ২ কিলো চাল ও ৩০০ গ্রাম ডাল, আবার কোনওদিন প্যাকেট ভরা থাকে ১ কিলো আটা আর সয়াবিনে। ২০২০ সালের এই উদ্যোগে প্রতিদিন এমন ২০টি প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে বলে স্কুলের প্রাক্তনীরা ভালবেসে এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘২০–তে কুড়ি’। পরের বছর যদি এই উদ্যোগ চালু থাকে তবে নাম হতে পারে, ‘২১–এ ২১’।
প্রাক্তনী এবং আরেক স্কুলের শিক্ষক সঞ্জয় বিষ্ণু বলেন, ‘প্রতিদিন ২০টি খাবারের প্যাকেট দেওয়া হলেও, কখনও বেশি লোকজন এলে, সেই সংখ্যা বাড়ে।’ ইন্দ্রনীলবাবুর কথায়, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন আমরা প্রায় ১৫০ জন প্রাক্তনী মিলে ‘মানবিক দেওয়াল’ গড়ে তুলি, তখন পোশাক বিলি করা হত। পরে করোনার জেরে লকডাউন শুরুর পর আমরা বুঝতে পারি, পোশাক নয়, মানুষের খাবার দরকার। তার পর ১০ জুন থেকে নতুন এই উদ্যোগ।’
আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের চারপাশের লোকজন, ডাক্তার, ব্যবসায়ীরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন। কেউ খাবার, কেউ অর্থ নিয়ে। তহবিলে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ এখন প্রায় ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। ৭০ বছরের পুরনো এই গ্রামীণ স্কুলের প্রাক্তনীরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। তাঁরাও নিয়মিত সাহায্য পাঠাচ্ছেন, যাতে এই কঠিন সময়ে ‘মানবিক দেওয়াল’ দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।