সরকারি কর্মীদের নিয়ে নবান্নের বৈঠকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিতে নবান্নে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সরকারি কর্মীদের মধ্যে দুর্নীতির ঘুঘুর বাসা রয়েছে। তা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। এর আগে ডিএ আন্দোলনের সময় সরকারি কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছিলেন মমতা। তবে বৃহস্পতির বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যে বেড়ে চলা জমি মাফিয়াদের দাদাগিরি নিয়ে। এর আগে সন্দেশখালি থেকে শিলিগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনের ঘটনায় বঙ্গ রাজনীতিতে জোর ঝড় উঠেছিল। এই আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতির বৈঠকে নির্দেশ দিলেন, জমি মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এদিকে ভিনরাজ্যের কেউ এসে যাতে এখানে দাদাগিরি না করতে পারে, তাও দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (আরও পড়ুন: এল 'ডিএ নোটিফিকেশন', আচমকাই লক্ষ্মীলাভ বাংলার সরকারি কর্মীদের)
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের জন্য সুখবর, নীরবেই জারি নয়া বিজ্ঞপ্তি, সই রাজ্যপালের
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কলকাতা পুলিশে রকমিশনার বিনীত গোয়েলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশের মেশিনারি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। সেটাকে ফের শক্তিশালী করতে হবে। জবরদখল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।' এদিকে হকার সমস্যার সমাধানের জন্যেও কমিশনারকে নির্দেশ দেন মমতা। এদিকে বৈঠকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সামনেই কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাদের কাজের সমালোচনা করে মমতা নির্দেশ দেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এদিকে মমতা আরও নির্দেশ দেন, যারা রাস্তা তৈরি করবেন, আগামী পাঁচবছর তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। (আরও পড়ুন: কাগুজে সিগন্যালেই কি কাঞ্চনজঙ্ঘা বিপত্তি ঘটেছিল? দুর্ঘটনা নিয়ে কী বলছে রেল...)
এদিকে কলকাতায় জমি দখল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিধাননগরেও জমি দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নাকি বলেন, ‘কিছু কিছু অফিসার টাকা খাচ্ছেন।’ সরকারি কর্মীদের মধ্যে দুর্নীতির ঘুঘুর বাসা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে ভোটের সময় রাজ্যে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে প্রচুর টাকা ঢুকেছে বলে দাবি করেন মমতা। এই নিয়ে এডিজি আইনশৃঙ্খলাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বিদ্যুতের বিল কমানো নিয়েও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদ্যুতের বিল অতিরিক্ত হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিটি দফতরের মাথায় সোলার প্যানেল বসানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনায় জমা পড়ল 'জয়েন্ট রিপোর্ট', বিস্ফোরক দাবি লোকো ইন্সপেক্টরের
এর আগে রাজ্য সরকারের সব দফতরের মন্ত্রী, সচিব, যুগ্মসচিব, জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই একাধিক আধিকারিকের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দফতরের সচিব রাজেশ পাণ্ডেকে কাজ নিয়ে সতর্কও করেন মমতা। এদিকে সমবায় সচিব কৃষ্ণা গুপ্তার বারংবার দিল্লি সফর নিয়ে নাকি বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। এদিকে তথ্য ও প্রযুক্তি দফতরের সচিব রাজীব কুমারকে বকুনি শুনতে হয় মমতার। এর পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষা বিভাগের কাজ নিয়ে দফতরের সচিব অনুপ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে মমতার রোষের মুখে পড়েন পঞ্চায়েত দফতরের সচিব পি উলগানাথন। আর সেই হাইপ্রোফাইল বৈঠকের ১০ দিন যেতে না যেতেই ফের নবান্নে বৈঠকে মমতা ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সরকারি কর্মীদের কাজকর্ম নিয়ে।