আজ, মঙ্গলবার মালদার সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দুষলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকদিন গঙ্গা ভাঙ্গনের জেরে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর থেকে শুরু করে ফসল সবকিছু। এমনকী গঙ্গা ভাঙনের জেরে ভয়াবহ আকার নিয়েছে এই জেলার সামশেরগঞ্জ এলাকা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ২০ মিটার এবং ১০০ মিটার এলাকায় একাধিক বাড়ি এখনও বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ভাঙ্গন রোধে বারবার সাহায্য চাইলেও মেলেনি কোনও সাহায্য। রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই চলছে কাজ ও পুনর্বাসন। একের পর এক গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গঙ্গার ধারে। এবার মানুষের দুর্দশার কথা ভাবে না কেন্দ্রীয় সরকার বলে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে ২০২৩ সালের ৫ মে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরেজমিনে দেখে যান ভাঙ্গন বিধ্বস্ত সামশেরগঞ্জ। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বরাদ্দ করেন ১০০ কোটি টাকা। ওই টাকায় কাজ শুরু হয়। ৬টি জায়গা রয়েছে যা ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনাকে তুলে ধরে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পরিকল্পনা নেয় না। রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগে গঙ্গার বিস্তীর্ণ এলাকার পাড় বাঁধানোর কাজ করেছে। ভাঙন ঠেকাতে রাজ্যের অর্থ বরাদ্দও করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিজেপি বিধায়ককে আবার তলব, আজই শেক্সপিয়র সরণি থানায় এসে হাজিরা দিতে হবে
অন্যদিকে ভাঙনের জেরে একাধিক এলাকায় নানা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। নিমতিতা ৪৪৮ বাড়ি, চাচন্দা ২২০টি বাড়ি, প্রতাপগঞ্জ ২২৩টি বাড়ি, বোগদাদনগর ১৫৭টি বাড়ি এবং তিনপুকুরিয়া ৭৫টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল। তাই রাজ্য সরকার মেরামত করার কাজ শুরু করেছে ৷ এখানে এখন ভয় ধরাচ্ছে ২০ মিটার এবং ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের আতঙ্ক। ২০ মিটার দূরত্বে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে—নিমতিতা ৩৭১ বাড়ি, চাচন্দা ২৪৪ বাড়ি, প্রতাপগঞ্জ ২৫ বাড়ি, বোগদাদনগর ২৯৩ বাড়ি এবং তিনপুকুরিয়া ৮টি বাড়ি। কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘সামশেরগঞ্জে ধুলিয়ান মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আমবাগান, রাস্তাঘাট, মন্দির মসজিদ সব গঙ্গা ভাঙনে ভেঙেছে। আমরা বারবার কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছি। কিন্তু, তারা কানেই তুলছে না। নির্বাচনের সময় ওরা শুধু বৈষম্য করতে আসে।’
এছাড়া সেচ দফতর সূত্রে খবর, ইউপিএ আমলে ফরাক্কা ব্যারেজ অথরিটির দায়িত্ব ছিল ১২০ কিমি অংশ তদারকি করার। যার মধ্যে ছিল আপ স্ট্রিমে ৪০ কিমি এবং ডাউন স্ট্রিমে ৮০ কিমি। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয় সরকার মাত্র ১৯ কিমির দায়িত্ব নিয়েছে বলে অভিযোগ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ২৪৬টি পরিবারকে পাট্টা দিয়েছেন। ৫৭০টি পরিবারকে বাড়ি বানাতে ৭০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সামশেরগঞ্জের কামালপুর গ্রামে ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ডান এবং বাঁদিকের পাড় তৈরি ও ক্ষয়রোধ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। চাচণ্ড, শিবপুর ধানঘড়া, ধুসুরিপাড়া, কামালপুর গ্রামে প্রায় ২০০০ মিটার নদীপাড়ের সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার জন্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।