তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নবীন–প্রবীণ দ্বন্দ্ব প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন সামনে চলে আসে। তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয় রাজ্য–রাজনীতিতে। এই আবহে ডায়মন্ডহারবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রে বার্তা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭০ বছর বয়স হলে নবজোয়ারের মতো কর্মসূচি নিয়ে কি হাঁটতে পারতাম? এমন প্রশ্ন তুলে নবীনের পক্ষে ব্যাটন ধরেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে বুড়ো নেতারা একটু চাপে পড়ে যান। আর ঠিক তার পরদিনই আজ, সোমবার গঙ্গাসাগরে পৌঁছে সরকারি মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি আমলাদের দেখিয়ে বলেন, ‘৬০ বছর বয়স হলেই যে কাউকে বিদায় দিতে হবে সেটা রাজ্য সরকার বিশ্বাস করে না। অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়।’
এই মন্তব্য করেই মুখ্যমন্ত্রী নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দেন। আর ঘুরিয়ে বললেও বার্তা পৌঁছে দেওয়া হল অভিষেকের কাছে। কিন্তু বিষয়টি হল, প্রবীণদের অবসরের একটা বিষয় থাকা উচিত। তাঁদের বিধায়ক–সাংসদ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত একটা বয়সের পর। এই কথা বলতে চেয়েছেন অভিষেক। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আজ গঙ্গাসাগরে পৌঁছে বলেন, ‘আমরা কিন্তু যাঁরা যোগ্য লোক তাঁদের ৬০ বছরে বিদায় দিই না। আমরা তাঁদের কাজকর্ম, পুরনো অভিজ্ঞতাকে পুরো কাজে লাগাই। একটা বিরল ব্যাপার হয়েছে। একসঙ্গে তিনজন কাজ করছেন। দু’জন প্রাক্তন, একজন বর্তমান মুখ্যসচিব।’ আসলে এই কথা বললেও সবাইকে নিয়ে চলার বার্তাই দিলেন। এই কথা শুনে প্রবীণরা অনেকটা আশ্বস্ত হলেন।
এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, সব পেশার মতো রাজনীতিতেও অবসরের বয়স থাকা উচিত। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘বয়স আবার কী। মনের বয়সই আসল বয়স।’ অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক নতুন মাত্রা যোগ করে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে, বছরের প্রথম দিন মমতা–অভিষেক দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন। আবার কুণাল ঘোষ, তাপস রায়েরা নবীনদের পক্ষে সওয়াল করেছেন। পাল্টা প্রবীণদের পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, ববি হাকিমদের।
আরও পড়ুন: লরি থেকে চুরি ১০ কোটির আইফোন, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ পরিবহণ সংস্থা
অন্যদিকে নবীন–প্রবীণ ইস্যুতে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে দুটি গোষ্ঠী। তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয় তৃণমূল কংগ্রেসকে। অবশেষে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বার্তা দেন, দলে নবীন–প্রবীণ সবাই থাকবেন। তারপর থেকে বিষয়টি ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘুরিয়ে আজ যা বললেন তাতে সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। নবীন ও প্রবীণ সকলকেই নিয়ে চলতে হবে। সেই বার্তা দিতেই রাজ্য সরকারি স্তরের কথা উল্লেখ করেন। তাই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমলাদের দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কাছে প্রবীণ–অভিজ্ঞদের পৃথক মূল্য আছে। যা তিনি কাজে লাগান। তাই অবসরের পরেও আবার অভিজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বার্তা দলের সবাই নিশ্চয়ই বুঝবেন।