মুসলিম ভোটের দাক্ষিণ্যে তৃণমূল কংগ্রেস বারবার নির্বাচনী বৈতরণী পার করে যায়? হিন্দু ভোট একেবারে যৎসামান্য পায়? বিজেপির তরফে হামেশাই যে দাবি করা হয়, সেটা পুরোপুরি মিথ্যাচার বলে দাবি করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা তৃণমূলের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য। একেবারে সাদা বোর্ডে অঙ্ক কষে তৃণমূল নেতা বোঝালেন, শুধু মুসলিম ভোটে জেতে না। হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকায় জোড়াফুল ফোটে বলে দাবি করেন দেবাংশু। তিনি দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে হিন্দু বা মুসলিম কোনও ফ্যাক্টরই নয়। রাজ্যে একজনের নামেই ভোট হয়, তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮০ শতাংশের বেশি হিন্দু থাকা আসনে তৃণমূলের ফল কেমন?
আর মমতাই যে ফ্যাক্টর, সেটা বোঝানোর জন্য অঙ্ক কষে দেবাংশু দাবি করেছেন, রাজ্যের ১৪৯টি বিধানসভা আসনে ৮০ শতাংশ বা তার বেশি হিন্দু ভোটার আছেন। আর সেই ১৪৯টি আসনের মধ্যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৮০টি আসনে লিড পেয়েছিল তৃণমূল। আর বিজেপি এগিয়ে ছিল ৬৯টি আসনে। সেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৮৭টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। আর বিজেপির ঝুলিতে ৬২টি আসন গিয়েছিল।
'৯০ শতাংশের বেশি হিন্দু থাকা আসনেও বাজিমাত মমতাদের'
আবার পশ্চিমবঙ্গের যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে হিন্দু ভোটার ৯০ শতাংশের বেশি, সেখানে ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল ৪৭টি আসনে জিতেছিল বলে দাবি করেছেন দেবাংশু। তৃণমূলের মুখপাত্র দাবি করেছেন, বিজেপির ঝুলিতে ৩২টি আসন গিয়েছিল। যা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও মোটামুটি একই স্তরে ছিল। সেইসময় ৪৬টি আসনে লিড ছিল তৃণমূলের। আর বিজেপি এগিয়ে ছিল ৩৩টি আসনে।
‘মিথ্যাচার’ ধরে ফেললেন দেবাংশু!
তিনি দাবি করেছেন, অনেকে বলেন যে তৃণমূল যে ৪৬ শতাংশ ভোট পায়, তার মধ্যে ৩০ শতাংশই হল সংখ্যালঘু ভোট। আর বাকি ১৬ শতাংশ ভোট হল হিন্দুদের। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ হিন্দুর মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ তৃণমূলকে ভোট দেন। আর সেই অঙ্কটা যে মিথ্যে, তা প্রমাণিত হয়ে গেল। ১০ জনের চারজন হিন্দু হয়তো তৃণমূলকে ভোট দেন। চারজন ভোট দেন বিজেপিকে। বাকিটা সিপিআইএম, কংগ্রেস বা অন্যান্যরা পায়। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ১০ জনের মধ্যে ছয়জন তৃণমূলকে ভোট দেন। অর্থাৎ উনিশ-বিশ ভোট হয়।
দেবাংশু দাবি করেন, বাংলায় হিন্দু-মুসলিমরা মমতাকেই ভোট দেন। এখানে ধর্ম বা জাত কোনও ফ্যাক্টর নয় বলে দাবি করেন তৃণমূলের মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘বাংলার নির্বাচনে হিন্দু, মুসলিম, জাত হয় না। বাংলার নির্বাচনে একটাই ফ্যাক্টর। আর সেই ফ্যাক্টরের নাম হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
আর দেবাংশু যখন সেই অঙ্ক কষেছেন, তখন বিধানসভা ভোটের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সুর বাঁধছে বিভিন্ন দল। এক বছর আগে থেকেই বিজেপি যে কায়দায় প্রচার করছে, তাতে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘২০০ পার’ করার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হওয়ার পরে এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে ২০২৬ সালে একেবারে মেরুকরণের নীতিতে ভরসা রাখতে চলেছে পদ্মশিবির।