দেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। বিভিন্ন সমীক্ষায় এ নিয়ে উদ্বেগজনক ছবি সামনে এসেছে। আর বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলা। যদিও বাল্যবিবাহ রোধে রাজ্যের তরফে অতীতে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারপরেও দূর করা যায়নি এই সামাজিক ব্যাধি। সাধারণত কখনও পুলিশ, বিডিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা পঞ্চায়েত বাল্যবিবাহ রোধে পদক্ষেপ করে থাকে। আর এবার বাল্যবিবাহ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর। এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসারদের। এই সমস্ত অফিসারের চাইল্ড ম্যারেজ প্রহিবিশন অফিসার করল দফতর। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকায় বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটলেই পদক্ষেপ করতে হবে আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন: ভারতে প্রতি মিনিটে বাধ্য হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৩ নাবালিকা! মর্মান্তিক রিপোর্ট
সাধারণত রাজ্যে বাল্যবিবাহের নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে যে জেলাগুলি রয়েছে সেগুলি হল- দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদা প্রভৃতি জেলা। এই জেলাগুলিতে প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। নাবালক নাবালিকাদের অনেক ক্ষেত্রে লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জানতে পারছে না পুলিশ প্রশাসন।। আর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। তাই নির্দিষ্ট অফিসারকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিতে চাইছিল দফতর। জানা যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ রোধে এলাকায় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি খোঁজ খবর রাখবেন এই অফিসাররা। এরপরই বাল্যবিবাহ রোধে পদক্ষেপ করবেন। যদিও অফিসাররা কীভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর এখনও জানানো হয়নি দফতরের তরফে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশ স্টাডি গ্রুপের 'টুওয়ার্ডস জাস্টিস: এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতি মিনিটে তিনজন মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে, সারা দেশে প্রতিদিন মাত্র তিনটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বরের বয়স ছিল ২১ বছরের বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ে শিশুর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বয়স্ক পুরুষরা নিজেদের কর্তৃত্ব ফলায়। প্রতিবেদনটি ২০১১ সালের আদমশুমারি, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো এবং জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে ২০১৮-২০২২ সালের ডেটাতে মাত্র ৩,৮৬৩টি বাল্যবিবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু, আদমশুমারির হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর ১৬ লক্ষ বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন চার হাজারের বেশি বাল্যবিবাহ হয়।