গত ৫ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। আবার নতুন করে অনেকে যোগ দিয়েছেন অনশনে। পুজোর মাঝেও আন্দোলনের ঝাঁজ বজায় ছিল। আর গতকাল দ্রোহের কার্নিভালে ধর্মতলা চত্বর প্রতিবাদীদের দখলেই চলে গিয়েছিল। এই সবের মাঝেই এবার জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে একটি পদক্ষেপ করল সরকার। উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবির অন্যতম ছিল কেন্দ্রীয় ভাবে রোগী রেফারেল সিস্টেম চালু করা। এই আবহে রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কেন্দ্রীয় রেফারেল পদ্ধতি চালু করল স্বাস্থ্য ভবন। (আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জড়িত আর্থিক তছরুপের সঙ্গে, আমাদের হাতে প্রমাণ আছে: ইডি)
আরও পড়ুন: মেয়ের ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছে পুলিশই: আরজি করের নির্যাতিতার মা
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টায় ১০টি ভরতীয় উড়ানে বোমাতঙ্ক, একের পর এক বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ অক্টোবর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলায় এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এর ফলে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসএসকেএম-ও যুক্ত হয়েছে এই রেফারেল ব্যবস্থার সঙ্গে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ‘টাইপ-এ’ (মহকুমা, স্টেট জেনারেল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল) চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগীকে রেফার করা যাবে। এদিকে প্রয়োজনে 'টাইপ বি' হাসপাতালেও রেফার করা যাবে সেখান থেকে। 'টাইপ বি' রেফার হাসপাতালগুলি হল জেলা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
রেফারেল চালু নিয়ে কী বলছেন ডাক্তাররা?
এদিকে এই ব্যবস্থায় এখনও সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁর বক্তব্য, পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হওয়া এই রেফারেল ব্যবস্থায় বেশ কিছু খামতি রয়েছে। এই আবহে জুনিয়র চিকিৎসকরা আশা ব্যক্ত করেন যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সরকারও সেই খামতিগুলির বিষয়ে বুঝতে পারবে। এই নিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, 'এই রেফারেল ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের কিছু পরামর্শ আছে। কিন্তু সরকার নিজের মতো করে করেছে। তবুও দেখা যাক। তবে সমস্যা মিটবে বলে মনে হচ্ছে না। জানতে পারছি, এই ব্যবস্থায় চিকিৎসকদেরই পুরো দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। তা করলে হবে না। সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট ভাবে কন্ট্রোল রুম করে, কর্মী রাখতে হবে।'
এদিকে নিজেদের বাকি দাবিতে অনড় থেকে আন্দোলন জারি রেখেছেন চিকিৎসকরা। গতকাল পুজো কার্নিভালের সময় ধর্মতলায় রানি রাসমণি রোডে হয় দ্রোহের কার্নিভাল। উল্লেখ্য, এই অনশন শুরু করেছিলেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। পরে অনিকেত মাহাতো সেই আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর একে একে অনিকেত, অনুষ্টুপ, পুলস্ত্য, তনয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাঝে আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার - পরিচয় পাণ্ডা এবং আলোলিকা ঘোড়ুই যোগ দিয়েছেন আমরণ অনশনে। আজ অনশন ধর্মঘটের দ্বাদশ দিন।
আন্দোলনকারীদের ১০ দফা দাবি কী কী?
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তাররা যে ১০ দফা দাবিতে এখন আন্দোলন করছেন, তা হল - নির্যাতিতার দ্রুত ন্যায়বিচার দিতে হবে, স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ, হাসপাতাগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে, হাসপাতালের খালি বেডের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাতে হবে, হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে, দ্রুত সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন করে সিসিটিভি, প্যানিক বোতামের ব্যবস্থা করতে হবে।