আজ, শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারবে। কিন্তু দু’দিন আগেই যে পরীক্ষার্থী তাঁর মাকে হারিয়েছে! তার কাছে এই পরীক্ষার ফলাফল কেমন মাত্রা রাখে? এই প্রশ্নই এখন দেখা দিয়েছে খাদিকুল গ্রামে। অভাবের তাড়নায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ের মাকে ভানু বাগের অবৈধ বাজি কারখানায় কাজ করতে হতো। আর সেখানের বিস্ফোরণেই মারা গিয়েছে তার মা। আর আজ এগরার খাদিকুলের উমা মাইতির মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বেরবে। তবে এখন নিশ্চুপ হয়ে পড়েছে উমা। এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেয়েটা। মুখে একটা শব্দও নেই। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আর বাড়িতে দুই দিদি বোনকে আগলে রেখেছে।
এই এগরা বিধানসভার ১ নম্বর ব্লকের সাহারা গ্রামপঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামেই ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক মৃত্যুমিছিল। অবৈধভাবে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৯ জনের প্রাণ গিয়েছে। স্বজন হারিয়ে এখন গোটা গ্রাম শোকে পাথর। তার মধ্যেই উমার মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হবে। কিন্তু আজ তার কাছে মায়ের থেকে বড় এই ফলাফল নয়। কারণ মায়ের রোজগারের টাকায় তো পড়াশোনা চলত। এখন বাকি শিক্ষা মিলবে কেমন করে? খাদিকুলের উমা মাইতির মা অম্বিকা মাইতি বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সামাজিক প্রকল্পই মেয়েটির একমাত্র ভরসা।
Madhyamik Result 2023 Live Updates: মাধ্যমিকের ফলাফলের লাইভ আপডেট দেখুন এখানে
কেমন আছে মাইতি পরিবার? কৃষ্ণপদ বাগের (ভানু) পুরনো বাড়ির অদূরেই থাকেন সুরেশ মাইতি। তাঁরই স্ত্রী অম্বিকা মাইতি। তাঁদের তিন মেয়ে শিউলি,পল্লবী ও উমা। সুরেশ মাইতি আগে কাজের কারণে নয়াদিল্লিতে থাকতেন। সেখানে একটি হোটেলে কাজ করতেন। কিন্তু স্ত্রী অম্বিকা চাইতেন মেয়েরা মায়ের পাশাপাশি বাবার স্নেহছায়া পেয়ে বড় হোক। তাই সুরেশ দিল্লির পাঠ চুকিয়ে খাদিকুলে চলে আসেন। চাষের কাজ করতেন। আর স্ত্রী অম্বিকা মেয়েদের পড়াশোনার খরচ টানতে ভানুর বাজি কারখানায় কাজ করতেন। বিস্ফোরণের পর গোটা পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? পরিবার সূত্রে খবর, সুরেশ–অম্বিকার বড় মেয়ে শিউলি ইসলামপুর হাসপাতালে নার্সিংয়ের কাজ করেন। মেজ মেয়ে পল্লবী মাইতি নার্সিং পড়ছে। বাড়ির ছোট মেয়ে উমা বৈতা মহেন্দ্রনাথ হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। আজ তারই ফলপ্রকাশ হবে। আর এই পরিস্থিতিতে বাড়ির বড় মেয়ে তথা উমার দিদি শিউলি মাইতি বলেন, ‘মা ছাড়া গোটা পরিবার যেন শূন্য। মা বারবার এই বাজি কারখানার কাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কারখানার মালিক ভানু বাগ বুঝিয়েছিল, সাবধানতা নিয়েই এই কারখানা চলছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ হন মা। পরে মারা যান। মায়ের এই অকাল প্রয়াণ কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না উমার। আজ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফলপ্রকাশ উমার। কিন্তু সে চুপ করে গিয়েছে।’