ট্যাব কাণ্ডে গ্রেফতারি বেড়েই চলেছে। একাধিক জেলার পুলিশ তৎপর হয়ে ময়দানে নেমেছে। এই আবহে সম্প্রতি শিলিগুড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তিনজনকে। সেই ধৃতরা হলেন দিবাকর দাস ওরফে বিট্টু, বিশাল ঢালি এবং গোপাল রায়। তাঁদের মধ্যে দিবাকর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। এই আবহে এবার গোয়েন্দারা দাবি করছেন, দুর্নীতির 'মাথা' আদতে এই শিক্ষক। তবে চক্র একটা নয়, এমন একাধিক চক্র ট্যাব কাণ্ডে টাকা আত্মস্যাৎ করেছে বলে দাবি পুলিশের। আর জামতাড়া গ্যাংয়ের মতো অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে হয়েছে ঘটানো হয়েছে এই কেলেঙ্কারি। এই চক্রগুলির জাল ইসলামপুর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়। (আরও পড়ুন: কসবা কাণ্ডের তদন্তে নয়া মোড়, সুশান্ত 'খুনের ছক' কষেছিল জেল ফেরত এক খুনের আসামি)
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে নয়া সূত্রের খোঁজে CBI, তলব এক পুলিশ অফিসারকে, ঘুরবে তদন্তের মোড়?
পুলিশ জানাচ্ছে, ধৃত দিবাকরের বয়স ২৮ বছর। তিনি চোপড়ার ঘিরনিগাঁওয়ের দলুয়াহাটের বাসিন্দা। গত ফেব্রুয়ারিতে চোপড়ার মিরচাগোলগছ প্রাথমিক স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান ছিলেন। তদন্তকারীরা দাবি করছেন, ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালের প্রযুক্তিগত ফাঁক কাজে লাগিয়ে ওই টাকা হাতিয়েছেন দিবাকর। জানা গিয়েছে, প্রথমেই পোর্টালের যে 'ডিফল্ট পাসওয়ার্ড' দেওয়া হয়, সেটা বদলে নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও অনেক স্কুলই তা করেনি। সেই সুযোগ নিয়ে সেগুলি 'হ্যাক' করে পড়ুয়াদের নামের পাশের অ্যাকাউন্টের নম্বর বদলে টাকা হাতিয়েছেন তিনি। ট্যাব কাণ্ডে এর আগে মালদা এবং কোচবিহারেরও দুই শিক্ষক ধরা পড়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে দিবাকরের যোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছ।
এদিকে ট্যাব কেলেঙ্কারিতে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে সাব্বির আলম নামে এক যুবক। জানা গিয়েছে, ধৃতের বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের কাজীবস্তি এলাকায়। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে হবিবপুর থানার পুলিশ। হবিবপুর থানা অন্তর্গত কেন্দপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত সে। ধৃতের দাবি, মাটিকাটার টাকা ঢুকাবে বলে তাঁর অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়েছিলেন একজন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি সাব্বিরের। এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছিলেন। জেনে বুঝেই এই কাজ করেছিলেন তিনি। ওই অ্যাকাউন্টে আর কোনও প্রতারণার টাকা ঢুকেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সাব্বিরের স্ত্রী নাজলি বেগম দাবি করেছেন, এক গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রর মালিকের কথায় অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিল স্বামী। তবে সাব্বির নিজে কোনও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়। এদিকে পুলিশ জানাচ্ছে, এই কেলেঙ্কারিতে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়ার জন্যে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন অনেকেই। অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়া ব্যক্তিদের ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা কমিশন দেওয়া হত।
এদিকে এর আগে রবিবার ট্যাব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিধাননগর থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ধৃতের নাম মাঝারুল আলম। তাঁর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার আমতলায়। মাঝারুলকে বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সাত পড়ুয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এই আবহে সোমবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। ধৃতকে আটদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠায় আদালত। অপরদিকে উসমান আলি, মনসুর আলম, রৌশন জামাল ও মোতাকাবের আলি নামে চারজনকে রবিবার রাতে ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার পুলিশ। সেই চারজন মালদাগামী বাসে ছিলেন। মোজাম্মেল হক নামক আরও একজনকে সেদিন ইসলামপুর থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল এই একই মামলায়।