মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে মালদা! তথ্য বলছে, যাবতীয় পদক্ষেপ করেও এই একটিমাত্র জেলায় কিছুতেই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র পাচার রোখা সম্ভব হচ্ছে না! এবার তাই মালদা জেলার মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি থেকে প্রশ্নপত্র পাচার রুখতে একদিকে যেমন প্রযুক্তির ঢালাও ব্যবহার করা হবে, তেমনই নজরদারিতে বাড়তি শিক্ষক ও আধিকারিকদেরও নিয়োগ করা হবে। তারপরও যদি কোনও পরীক্ষার্থী কোনও অনিয়ম করে, তাহলে পর্ষদের পক্ষ থেকে তার পরীক্ষাই বাতিল করে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, এবার মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
মালদার এবারের পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন?
পর্ষদ সূত্রে যে তথ্য সামনে এসেছে, সেই অনুসারে - এবছরের মাধ্যমিকে মালদা জেলার ১২২টি কেন্দ্রে ২৮২টি স্কুলের ৪৭ হাজার ৯০০ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দেবে।
প্রশ্নপত্র পাচার ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
সারারাজ্যের মধ্যে কেবলমাত্র মালদা জেলাতেই ১৯টি ভেন্যু ও তার অধীনে থাকা শতাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে বাড়তি নজরদারি চালাতে অতিরিক্ত ৩৬ জন অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার বা এভিএস-কে নিযুক্ত করছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
তথ্য বলছে, এই এভিএস-দের কাজ হবে জেলার সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারি চালানো। শুধুমাত্র এই কাজটিই করবেন তাঁরা। যা নাকি মাধ্যমিক, এমনকী - উচ্চমাধ্যমিকের ইতিহাসেও নজিরবিহীন! জানা গিয়েছে -
মাধ্যমিক চলাকালীন মালদার ১৯টি ভেন্যুর মধ্যে ১৮টিতেই দু'জন করে অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার নিযুক্ত করা হবে। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র ভুতনি। সেখানে একটি ভেন্যুর অধীনে থাকছে তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র। তাই, সেখানে বাড়তি কোনও এভিএস-কে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
অর্থাৎ, এই হিসাবে - মালদার ১৯টি ভেন্যুতে ১৯ জন অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার তো থাকছেনই। তারও বাইরে আরও ৩৬ জন (১৮টিতে অতিরিক্ত আরও দু'জনের হিসাবে) অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার থাকছেন। তাহলে শুধুমাত্র এই একটি জেলাতেই মোট ৫৫ জন এভিএস থাকছেন।
এঁদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বাড়তি ৩৬ জন এভিএস-এর সর্বক্ষণ যাতায়াত করবেন। অর্থাৎ, মূল ভেন্যু ছাড়া অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও ঘুরে ঘুরে নজরদারি চালাবেন তাঁরা। তাঁদের কাজ হবে -
১) মধ্যশিক্ষা পর্ষদের 'এলিগজ্যাম অ্যাপ'–এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক মতো সচল রয়েছে কিনা
২) সঠিক সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছচ্ছে কিনা
৩) প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার সময় পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করা হচ্ছে কিনা। তাদের কাছে স্মার্টফোন বা অন্য কোনও নিষিদ্ধ কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট রয়েছে কিনা
৪) সঠিক সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা এবং তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে কিনা
৫) পরীক্ষার পর উত্তরপত্র সংগ্রহ করা এবং তা প্যাকেটবন্দি করা হচ্ছে কিনা, প্রভৃতি।
এমনকী, বিশেষ প্রয়োজনে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে এই এভিএস–রা 'এলিগজ্যাম অ্যাপ'–এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে অডিয়ো বা ভিডিয়ো কল করে পর্ষদকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেও পারবেন। যে কোনও অনিয়ম নজরে পড়লেই সল্টলেকের নিবেদিতা ভবনে রিপোর্ট করতে পারবেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চস্তর থেকে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।