উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আসন্ন। তার আগেই দ্বাদশ শ্রেণির এই বোর্ড পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে নয়া পদক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। যদিও, প্রকারান্তরে বলা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গুরুতর সমস্যার সমাধান করতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেখানো পথেই হাঁটল তারা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য নিজেই। তিনি জানিয়েছেন, এবার থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের 'সিল' আর দফায় দফায় খোলা হবে না। তা খোলা হবে একবারই। পরীক্ষার হলের ভিতর, পরীক্ষার্থীদের চোখের সামনে।
আসলে এত দিন যে নিয়ম প্রচলিত ছিল, সেই অনুসারে - সংসদের কার্যালয় থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রথমে পৌঁছত সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রের সুপারভাইজারের ঘরে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সিল খুলতেন সেই সুপারভাইজার। তারপর তিনি ফের সেই প্রশ্নপত্র সিল করে পাঠাতেন পরীক্ষার হলে। সেখানে কর্তব্যরত শিক্ষক ও আধিকারিকরা আবার প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সিল খুলতেন।
কিন্তু, এবার থেকে আর সুপারভাইজার উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের সিল খুলবেন না। বস্তুত, এবার থেকে প্রশ্নপত্র খোলা হবে একবারই, এবং সেটা খোলা হবে একেবারে পরীক্ষার হলে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে।
মনে করা হচ্ছে, এর ফলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কেউই আর প্রশ্নপত্রের নাগাল পাবে না। ফলত, তা ফাঁস করাও যাবে না।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর যাতে রাজ্যের সর্বত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় ঘুরে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করছেন চিরঞ্জীব।
এই কারণেই বৃহস্পতিবার মালদহ টাউনে এসেছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক সারার পর সংসদ সভাপতি জানান, এবার প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হবে। এবং পরীক্ষার্থীদের সেই মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতর ঢুকতে হবে। পাশাপাশি, প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে বারকোড, সিরিয়াল নম্বর, কিউআর কোডের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থাগুলিও রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে এর আগেই উদ্যোগী হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। গতবার থেকেই সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধাঁচে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রে ‘ইউনিক সিরিয়াল নম্বর’-এর ব্যবহার চালু হয়েছিল।
এটি এমন একটি ব্যবস্থাপনা, যার মাধ্যমে কোনও কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেলেও অপরাধীকে সহজে শনাক্ত করা যায় বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রের উপরে ডান দিকে একটি স্বতন্ত্র সিরিয়াল নম্বর থাকে। সেই নম্বরটি পরীক্ষাক্ষার্থীদের তাদের উত্তরপত্রের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় লিখতে হয়।
নম্বরটি ঠিক করে লেখা হয়েছে কিনা, সেটা পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা মিলিয়ে দেখে নেন। পরবর্তীতে কোনও কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এই নম্বর মিলিয়ে অপরাধীকে খুঁজে বের করা হয়।