নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট না করলেও হলদিয়ার অরাজনৈতিক সভা থেকে ফের একবার নাম না করে তৃণমূলকে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের ১২১তম জন্মদিনের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন, ভারতবর্ষের মধ্যে কোনও ভারতীয় বহিরাগত হয় কী করে? আমরা ভাল কাজের জন্য লড়বো। দেশমাতৃকাকে বন্দন করবো। আমরা প্রথমে ভারতীয়, তার পরে বাঙালি।
এদিনও শুভেন্দুর সভায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তকে স্মরণ করে শুভেন্দু বলেন, ভারতে একমাত্র জাতীয় সরকার টিকেছিল তাম্রলিপ্তে। সেই আন্দোলনেরই ছোট সংস্করণ ছিল নন্দীগ্রাম। সতীশ সামন্তের অবদানকে স্মরণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘রাজনৈতিক মত – পথের যাই পরিবর্তন ঘটুক না কেন, যে স্থিতাবস্থাই থাকুক না কেন, যে ভাবে যে পদেই আমরা থাকি না কেন, আমাদের সব থেকে বড় পরিচয় কী? আমরা প্রথমে ভারতীয় তার পরে বাঙালি’।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অরাজনৈতিক রূপ তুলে ধরে সেখানকার বিধায়ক বলেন, ‘নন্দীগ্রামের আন্দোলন কোনও একটা দলের ছিল না, কোনও একটা ব্যক্তির ছিল না। সেই আন্দোলন ছিল মানুষের আন্দোলন। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার তৈরির সময় যে লড়াই হয়েছিল তারই ছোট সংস্কার ছিল নন্দীগ্রাম আন্দোলন। মানুষ জয়যুক্ত হয়েছে’।
রাজ্যে বাঙালি ও হিন্দিভাষীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে তাকেও বেঁধেন শুভেন্দু। বলেন, ‘সতীশবাবু কখনও জওহরলাল নেহেরুকে বহিরাগত বলে ভাবতেন না। আর পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু কখনো সতীশবাবুকে অহিন্দিভাষী বলে ভাবতেন না। এটাই হল ভারতবর্ষ। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’। সঙ্গে নাম না করে তৃণমূলকে তাঁর কটাক্ষ, ‘কাউকে বলা হয়েছে, শুভেন্দুর অবস্থানটা স্পষ্ট নয়। তাই যাওয়া যাবে না’।
শুভেন্দুর শপথ, ‘আমরা ভাল কাজের জন্য লড়বো। দেশমাতৃকাকে বন্দন করবো। বেকার যুবকের কর্মসংস্থান, কৃষকের অধিকার আর মিলেমিশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হবে আমাদের একমাত্র মত আর পথ’।
এর পরই নাম না করে তৃণমূলে রাজ্যে দলতন্ত্র কায়েমের অভিযোগে বিদ্ধ করেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, ‘সংবিধানে যে ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল ভাবনার কথা লেখা রয়েছে তা পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে। কেন ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, অফ দ্য পার্টি ব্যবস্থা থাকবে? গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষকে নিয়ে এই লড়াইতে আপনাদের সেবক শুভেন্দু অধিকারী থাকবে। আর যারা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন শুনে রাখুন। আমি অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী। এখানে আসতে আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনে এখানে আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। একবার নয় নন্দীগ্রাম – হলদিয়া – খেজুরি – জঙ্গলমহল মিলে ১১ বার আমাকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু জনশক্তি, যুবশক্তি, মাতৃশক্তি আশীর্বাদ আমাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে’।
শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ, ‘শুভেন্দু অধিকারী কোনও পদের লোভ করেন না। কেউ কেউ বলেছিলেন, পদ দেখিয়ে লোক আনছে। আমি ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরও আমার সভা সমিতিতে লোক আসে। এই জনগণের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। কেউ বা কারও ইচ্ছায় এই সম্পর্ক ছিন্ন করা অত সোজা নয়। শুভেন্দুর পরিবার বাংলা – বাঙালির পরিবার। পান্তা ভাত খাওয়া গ্রামের লোকের পরিবার। আগামীর লড়াইতে গ্রাম জিতবে, জেলা জিতবে’।
সঙ্গে নাম না করে তৃণমূল নেতাদের তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘অনেকে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। তারা অনেকে বড় বড় পদে আছেন। কিন্তু আপনারা কয়েকদিন পরে অবস্থাটা টের পাবেন। জনগণ যখন চট ঘেরা জায়গাটায় যাবে তখন এমন জায়গায় আঙুলটা টিপবে, আপনাদের অবস্থাও অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠ, বিনয় কোঙারের মতো হবে’।