বাঁকুড়ার একটি একটি করে আসন বুঝে নেব। একটাতেও বিজেপি থাকবে না। একটাতেও সিপিএম থাকবে না— করোনা আবহে প্রথম কোনও রাজনৈতিক সভা থেকে এভাবেই হুঙ্কার দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শুনুকপাহাড়ি ময়দানের জনসভা ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল জননেত্রীর ভূমিকায়। সভামঞ্চ থেকে বিজেপি–কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘তোদের ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার কর। আমি জেলে থাকব। আমি জেলে থেকে বাংলাকে জেতাব। এই চ্যালেঞ্জ করে গেলাম।’
তাঁর কথায়, ‘লালুপ্রসাদ যাদবকে তো অনেকদিন ধরে জেলে পুরে রেখেছ। তাতে আটকাতে পেরেছ?’ বিহারে বিধানসভা ভোটে বিজেপি–র জেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিহারে ওটা জেতা? ওটা হারা, ওটা জেতা নয়।’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘ভোট এলেই তৃণমূলকে ভয় দেখানো শুরু হয়। যাতে তৃণমূল নেতারা ভয় পেয়ে ওদের সঙ্গে চলে যায়। ওরা বলে, হয় ঘরে থাকো, নয়তো জেলে থাকো। মনে রাখবেন, এই সব চমকানি, ধমকানি, টাকার কাছে আমি ভয় পাই না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘বাঁকুড়ার প্রতিটি জায়গা শান্তিতে রয়েছে। আর তা দেখে খুব রাগ হয়েছে সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেসের।’ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘তিনটে জদাই, মাধাই, গদাই এক হয়েছে। আর এক হয়ে তৃণমূলকে হারানোর জন্য লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করেছে। একসঙ্গে টাকা নিয়েছে, একসঙ্গে ভোট দিয়েছে। যে সিপিএমের হার্মাদ এক সময় মানুষের ওপর অত্যাচার করেছিল সেই হার্মাদ বিজেপি–র হার্মাদে পরিণত হয়েছে। রঙটা শুধু পাল্টে গিয়েছে। হৃদয়টা একই আছে।’ সিপিএম–কে মমতার কটাক্ষ, ‘সিপিএম–কে দেখে আরও লজ্জা হয়। সব নির্লজ্জ। এরা বিজেপি–র পায়ে পড়েছে নিজেদের চুরি থেকে বাঁচানোর জন্য। সারদা–নারদা কিন্তু ওরাই করেছে।’
এদিন তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস করতে হলে ত্যাগী হতে হবে, লোভী হলে চলবে না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাজনীতিতে তিন ধরনের লোক থাকে। লোভী, ভোগী আর ত্যাগী। সিপিএম হচ্ছে আজ সবচেয়ে বড় লোভী। বিজেপি হল ভোগী। আর তৃণমূল দল যদি করতে হয় তবে আপনাদের হতে হবে ত্যাগী। ওই লোভের পাল্লায় পড়বেন না।’
নাম না করে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘অনেক টাকা হয়েছে না? হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। আগে খেতে পেত না। একটা বিড়ি তিনবার টানত। আর এখন, টাকার অফার। ফোন করে তৃণমূলকর্মী, বিধায়কদের লক্ষ, কোটি টাকার অফার দিচ্ছে। এটা একটা রাজনৈতিক দল? বলতে লজ্জা হয়।’
মমতা এদিন অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘ভোট এলে দেখবেন কারও কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা জমা দিচ্ছে, ৫ হাজার টাকা জমা দিচ্ছে। এলাকায় লুকিয়ে লুকিয়ে টাকা দিচ্ছে। পুলিশের বিভিন্ন এজেন্সি, প্রেস–মিডিয়ার মাধ্যমেও টাকা দেওয়া হয়।’ এদিন জননেত্রী সাধারণ মানুষকে পরমার্শ দেন, ‘টাকা দিলে সেই টাকা নিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন, ওই টাকা আপনাদের টাকা। ওদের টাকা নয়। নেবেন টাকা, ভোটের বাক্স করবেন ফাঁকা। ঠিক আছে? এখন থেকে মনে রাখবেন, টাকাটা ওদের নয়।’