আমফান হানায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা ত্রাণ বাবদ আর্থিক সাহায্য ১,০০০ কোটি টাকার দশগুণ ক্ষতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের, দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতির মোট পরিমাণ হিসাব করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আমফানের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান সরেজমিনে দেখতে গিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কমপক্ষে ১০ লাখ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গোটা জেলায় ৭৩ লাখ বাসিন্দা চরম বিপদে পড়েছেন। ত্রাণ বণ্টনে যেন কোনও বাজে খরচ না হয়। জাতীয় বিপর্যয়ের চেয়েও বড় সমস্যার সম্মুখীন আমরা। আমাদের এখন ৪টি বড় সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক আর এখন এই ঘূর্ণিঝড়। এবং গত দুই মাস যাবৎ রাজ্য সরকারের কোনও আয় নেই।
আরও পড়ুন: আমফানে বিনষ্ট সুন্দরবনের ম্যাংগ্রোভ বন, নোনাজলে ৫ বছর নিষ্ফলা কৃষিজমি ও ভেড়ি
এর আগে শুক্রবার মমতা বলেছিলেন, রাজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীরা ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ঈঙ্গিত দিতে পারেননি। তাঁদের মতে, আমফানের সুবাদে ক্ষতির হিসাব কষতে ৭-১০ দিন সময় লাগতে পারে।
ওই দিনের সফরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ৫৬ কিমি নদীবাঁধ ভেঙে পড়েছে, যা বর্ষা আগমনের আগেই সারিয়ে ফেলা জরুরি।
এ দিকে রাজ্য সরকারের সেচ ও জলসম্পদ মন্ত্রকের নথিপত্র ঘেঁটে হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে যে, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লার দাপটে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে মোট ৭৭৮ কিমি নদীবাঁধ মেরামত করতে হয়েছিল, যার মধ্যে ১৭৭ কিমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ৬০১ কিমি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই এলাকায় ২০০৯ সালে মোট নদীবাঁধের দৈর্ঘ্য ছিল ৩,১২২ কিমি। ২০১০ সালে বাঁধ মেরামতি প্রকল্প অনুমোদিত হয় এবং তার জন্য ৫,০৩২ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ চলার পরে নদীবাঁধ সারাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে।
আরও পড়ুন: নিজে সব কৃতিত্ব নেবেন বলে তিন দিন ধরে সেনাকে ডাকেননি মমতা: অধীর
এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমস-কে রাজ্যের পঞ্চায়েত উন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ফসল ও সম্পত্তির মোট ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করতে সময় লাগবে। আপাতত মরা মনরেগা প্রকল্পের আওতায় সংরক্ষণের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানও হবে।’
রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘সুন্দরবনের সমস্ত বিট অফিস, রেঞ্জ অফিস, ওয়াচ টাওয়ার এবং নজরদারি ক্যামেরা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোর এরিয়ায় বাঘদের আটকে রাখার জন্য কয়েক কিমি দীর্ঘ ফেন্সিং, জেটি ও বন দফতরের লাগানো প্ল্যান্টেশনের সমূহ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বিশাল মাপের, কিন্তু সঠিক হিসাব করতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে।’
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সুপার সাইক্লোন আমফানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৬ হয়েছে। কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চল-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বিদ্যুৎ, পানীয় জন, কেবল টিভি, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও উন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে পরিষেবা চালুর দাবিতে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে ব্যাটন চার্জ করতে হয়।