করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জখমদের দেখার জন্য ওড়িশা থেকে সরাসরি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাসপাতাল পরিদর্শনের পর তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর–সহ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের বড় উপহার দিয়ে গেলেন। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ধাঁচে এই মেডিক্যাল কলেজেও নতুন করে ১০০টি বেডের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট গড়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, এই হাসপাতালে ক্যান্সার ব্লকও তৈরির ঘোষণা করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী সকলের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে জেলা প্রশাসনের প্রশংসার পাশাপাশি হাসপাতালের পরিকাঠামো বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন তিনি। কয়েক বছর আগেও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। বাম জমানায় অনেকেই এই হাসপাতালকে ‘রেফার হাসপাতাল’ বলে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু গত এক দশকে হাসপাতালের চেহারা আমূল বদলে গিয়েছে। এই হাসপাতালে গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য ‘মাতৃ মা’ ইউনিট জেলাবাসীর কাছে বড় ভরসা। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর আহত হয়ে ৬১ জন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মেদিনীপুরের স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টানা চারদিন ধরে এখানকার নার্স, ডাক্তাররা দারুণভাবে কাজ করেছে। আমি খেয়াল রেখেছি। আমি খুব খুশি যে এমন বিপদের সময়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এই হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো হচ্ছে। আজ থেকে ১০০ বেডের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট চালু হচ্ছে। এছাড়া ক্যানসার ইউনিটও চালু করছি।’ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট আগে না থাকায় বড় কোনও দুর্ঘটনায় গুরুতর জখমদের কলকাতায় স্থানান্তর করতে হয়। তাছাড়া জেলায় ক্যানসার আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এইসব রোগীর সিংহভাগ কলকাতা না হলে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণায় জেলাবাসীর মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে।
ঠিক কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? জেলা হাসপাতালগুলির মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো অনেকটাই উন্নত। তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘এই জেলাকে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। দুর্ঘটনার পর থেকে মেদিনীপুর জেলা ডাক্তার দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে সাহায্য করেছে। এই জেলার এডিএম সৌমেন মহাপাত্র চারদিন ধরে ওখানে কাজ করেছে। জেলার অফিসারদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওঁরা দুর্ঘটনার পর যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। সেই জন্য আজকে আমি কিছু করে গেলাম। যা আগামী দিনে হবে। এই মেডিক্যাল কলেজে ১০০ বেডের নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এখন মাল্টি সুপার হাসপাতাল। এখানকার মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের তিনতলা বিল্ডিং রয়েছে। আরও একটা নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ক্যাথল্যাব হচ্ছে। আমাদের সরকার মৃতদের পরিবার ও আহতদের হাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ তুলে দেবে।’