ওড়িশার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় কেঁদে উঠল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষদের জন্য আবেগময়ী কবিতা লিখলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। যে কবিতার প্রতিটি ছত্রে-ছত্রে যেন স্বজন হারানো মানুষদের কষ্ট, আর্তি ফুটে উঠল। প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যুর ফলে কতগুলি পরিবার যে নিঃস্ব হয়ে গেল, কত শিশু যে বাবা-মা'কে হারাল, তা যেন মুখ্যমন্ত্রীর কবিতায় জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে।
ট্রেন দুর্ঘটনা (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা)
এক অজানা দ্বীর্ঘশ্বাস
ব্যথা বেদনায় শোকাতুর নাভিঃশ্বাস।
এখনও ভাসছে ঘ্রাণে দুর্গন্ধ
লাশকাটা ঘরে ওরা ঘুমোচ্ছে
একেবারে শেষঘুম।
আর কথা বলবে না
আর তাকাবে না
আর কোনও যন্ত্রণা নয় -
হাত কাটা, পা কাটা,
দেহ কাটা - পুড়ে গেছে একেবারে শরীরগুলো।
মাত্র পঞ্চাশ দিনের নব্য শিশু
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে
মায়ের থনে, সাদা কাপড়ে।
কারও বা গলায়
শেষকর্মের পরিহিত একটি থান,
আঁখির জল সব শুকিয়ে গেছে
অনেক হাহাকারে হৃদয়ে দুর্ভিক্ষ
চোখের সামনে জ্বলছে চিতা
মুহূর্তে উধাও জীবন্ত শরীর।
কাঁদবার জন্য পড়ে রইল
স্বজন-হারানো আকাশ-বাতাস,
সমুদ্র-পাহাড়, পরিবার -
আমরা একটু ভাবলাম কি?
আরও পড়ুন: ‘জেলার অফিসারদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ’, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নয়া ঘোষণা মমতার
নেটপাড়ার প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেগমাখা কবিতায় চোখ ভিজেছে নেটিজেনদেরও। তেমনই একজন বলেন, 'খুবই বেদনাদায়ক লেখা, অসাধারণ দিদি। এই ট্রেন দুর্ঘটনা যে কতটা কষ্টদায়ক, তা বলার ভাষা নেই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে যাঁরা স্বজন হারালেন, তাঁরা যেন এই কষ্ট সহ্য করার শক্তি পান এবং ভবিষ্যতে যেন এরকম দুর্ঘটনা কখনও না ঘটে।' অপর একজন বলেন, ‘মন ছুঁয়ে গেল কবিতাটা। কত পরিবার স্বজন হারাল। কত বৃদ্ধ বাবা-মা তাঁর শেষ সম্বল হারালেন। চিন্তা করলেই গা শিউরে ওঠে। এর দায় কখনও এড়াতে পারে না ভারতীয় রেল। চাই না আমাদের বুলেট ট্রেন, চাই যাত্রী সুরক্ষা।’
সেই অভিশপ্ত দিনে কী হয়েছিল?
গত সপ্তাহের শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা ওড়িশার বালাসোরে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা হয়। বালাসোর জেলার বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে মালগাড়িতে ধাক্কা মারে আপ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। যে মালগাড়িতে আকরিক লোহা বোঝাই ছিল। তার জেরে লাইন থেকে ছিটকে যায় করমণ্ডলের একাধিক কোচ। কয়েকটি অন্য লাইনেও পড়ে। সেইসময় উলটোদিক থেকে ডাউন SMVT বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস আসছিল। যা করমণ্ডলের কোচে ধাক্কা মারে। লাইনচ্যুত হয়ে যায় হাওড়াগামী ট্রেনেরও একাধিক কোচ। ওই ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১,০০০ জনের বেশি। মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষেরও। আহতও হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেকে। মৃতদের পরিবার এবং আহতদের আর্থিক অনুদান প্রদান করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)