দীপাবলির ঠিক আগে হামলার ছক কষেছিল পাকিস্তান। আর সেই মতো জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত বনাম পাকিস্তানের সেনার মধ্যে চরম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হল! ভারতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা নিয়ে উরি, দাওয়ার, নওগাঁও, তাংধার, সৌজিয়ান, কেরান, মাচিল, গুরেজ- একের পর এক সেক্টর জুড়ে শুরু হয় নিরন্তর গুলির লড়াই। আর তাতেই সুদূর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় পাক সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন গ্রামের ছেলে সুবোধ ঘোষ। মাত্র ২৪ বছরের এই তরুণ সেনাকর্মীর মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে তেহট্টের সেই রঘুনাথপুর গ্রাম শোকস্তব্ধ। আলোর উৎসব এলেও শোকের ছায়ায় এই সেনাকর্মীর বাড়িতে আলো জ্বলবে না।
শুক্রবার দুপুর থেকে দু’দেশের সেনা এবং সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছিল সংঘর্ষ, গুলিযুদ্ধ, মর্টার শেলিং। গ্রামের পর গ্রাম খালি করে দেওয়া হচ্ছিল সীমান্তে। আত্মরক্ষায় চারটি গ্রামে বাঙ্কারেও আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) এক সাব–ইন্সপেক্টর অফিসার সহ ভারতের পাঁচ নিরাপত্তারক্ষী এবং ছ’জন নিরীহ গ্রামবাসী পাকিস্তানের গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন। বিএসএফের ওই কর্মীর নাম রাকেশ দোভাল (৩৯)। তিনি উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। শহিদ জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন এই বাঙালিও, সুবোধ ঘোষ। তাঁর বাড়ি নদীয়ার তেহট্টে।
পরিবার সূত্রে খবর, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গানারের পদে ছিলেন সুবোধ। নিজের দক্ষতায় অল্প বয়সেই চাকরি পেয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তার পর থেকে ওই পরিবার–সহ গোটা গ্রামে শুধুই শোক, হাহাকার আর চোখের জল। গ্রামের বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন সুবোধের বাড়ি। গত জুলাই মাসে শেষবার তিনি বাড়ি এসেছিলেন এক মাসের কিছু বেশি সময়ের জন্য। বিয়েও করেছিলেন। তিন মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর।
দীপাবলি উৎসবের মধ্যেই কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান শুরু করেছে প্রক্সি ওয়ার! জবাব দিয়েছে ভারতও। কিন্তু এভাবে বাঙালির তরুণের শহিদ হয়ে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেন না। গুলিগোলার লড়াইয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে প্রাণ হারান সুবোধ।
সুবোধের মা বাসন্তী ঘোষের চোখের জল থামছে না। তার মধ্যেই বলেন, ‘বিকেলে কাশ্মীর থেকে ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গুলিতে আমার ছেলে প্রাণ হারিয়েছে।’
সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতা ঘোষ একপলকে চেয়ে আছেন। একটু সম্বিত ফিরে তিনি কাঁদতে–কাঁদতে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী বহুবার ফোন করে মেয়ের খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু আজ সকাল থেকে ফোন বন্ধ। তখনও বুঝিনি আমার এমন সর্বনাশ হয়েছে।’