তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতির পেল্লায় পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের তালিকায় তাঁর নাম আছে। আর তার জেরে প্রথম কিস্তির টাকাও পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। সেই সুযোগে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপিও। বুথ সভাপতির দাবি তাঁর পাকা বাড়ি নেই। মাটির বাড়ি আছে। অশান্তির ভয়ে সবাই মুখ না খুললেও গ্রামের কেউ কেউ বলছেন পাকা বাড়ি আছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতার। অথচ গ্রামের এমন অনেকে আছেন যাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আবেদন করেও মেলেনি পাকা বাড়ি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই বিষয়টি নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জানান, যদি তৃণমূল কংগ্রেস নেতার পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি পেয়ে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে বিডিও’কে জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সমীক্ষা এবং যোগ্যরা যাতে বাড়ি পাই। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নানা স্তরের সমীক্ষা নিয়ে। এই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খুড়শি গ্রামে ঘটেছে। এই গ্রামের বাসিন্দা তপন মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী কাজল মণ্ডল ও তাঁদের এক ছেলে সুমন মণ্ডলকে নিয়ে বসবাস করেন। তপন মণ্ডল পেশায় কৃষক হলেও তিনি খুড়শি বুথের তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি। স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে তিনি মাটির বাড়িতে বসবাস করলেও গ্রামেই নবনির্মিত একটি একতলা পেল্লায় পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে কয়লা খনি ধসে মৃত ১১ জনের দেহ উদ্ধার, নিখোঁজ ১, উদ্ধার কাজ জারি
এবার এই ঘটনা নিয়েই খুড়শি গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল কমিটির সদস্য নাজির হুসেন খান তাঁর বুথ সভাপতির পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি নিয়েছেন বলে সরব হন। নাজির হুসেন খানের অভিযোগ, ‘বুথ সভাপতি তপন মণ্ডলের পাকা বাড়ি আছে। তারপরও ‘বাংলা বাড়ি’ প্রকল্পের তালিকায় নাম রয়েছে। এমনকী প্রথম কিস্তির টাকাও ঢুকেছে। অথচ বুথে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন তাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তারপরও মেলেনি। এই নিয়ে প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।’ তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতার এমন অভিযোগে জোর বিতর্ক তৈরি করেছে চন্দ্রকোনায়। তবে বুথ সভাপতি তপন মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া নিতে গেলে তিনি এসব অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, মাটির বাড়ি রয়েছে। তাতেই তিনি বসবাস করেন। যদিও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন এবং প্রথম কিস্তির টাকাও ঢুকেছে তা স্বীকার করেছেন।
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে তা নিয়ে শাসকদলকে বিঁধেছে বিজেপি। বিজেপির চন্দ্রকোনা–১ মন্ডল সভাপতি সুকান্ত দোলুই বলেন, ‘আবাস যোজনার বাড়ি বন্টনে প্রশাসন ও তৃণমূলের দুর্নীতি সামনে আসছে। খুড়শির বুথ সভাপতির পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি পাওয়ার বিষয়টি তাঁরাও জানেন। তাদের দলের বুথ সভাপতির বাড়ি পাওয়া নিয়ে দলের নেতারা সরব হওয়ায় প্রমাণিত তাদের অভিযোগ ভুল না।’ আর ভগবন্তপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মোনাজুর মোল্লার কথায়, ‘এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তৃণমূলের বুথ সভাপতি বাড়ি পেয়েছেন এমন অভিযোগ আসলে তদন্ত করে বিডিওকে জানানো হবে।’