মুকুল রায় বিতর্কের সময়ে কোনও ‘সাফাই’ দেননি। কিন্তু গত শুক্রবার অমিত শাহের কাছে রাজ্যের চার সাংসদ বঙ্গ বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দলের নালিশ করার পরই সাংবাদিক বৈঠকে ‘সাফাই’ দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর এই ভোলবদলের আগে কী কী হয়েছিল, তা দেখে নিন একনজরে -
গত ২২ জুলাই থেকে দিল্লিতে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের বৈঠক ছিল। তিনদিনের সেই বৈঠকের মাঝপথেই দিল্লি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন মুকুল রায়। তা নিয়ে তুুমুল জল্পনা শুরু হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতেই প্রথম দিন বৈঠক করেই মুকুল ফিরে গিয়েছেন। কলকাতায় ফিরে মুকুল রায় আবার দাবি করেন, চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি তড়িঘড়ি ফিরে এসেছেন।
বিজেপি সূত্রে অবশ্য খবর, ২২ জুলাই দিল্লির বৈঠকে একটি রিপোর্ট নিয়ে দিলীপ ও মুকুলের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। তা ক্রমশ ‘বাদানুবাদ’-এ গড়ায়। পরদিন দিলীপের দিল্লির বাসভবনে বৈঠকে আর যোগ দেননি মুকুল। বঙ্গ বিজেপি নেতারা সরাসরি সে কথা স্বীকার না করলেও মুকুল-দিলীপের ‘মন কষাকষি’ উড়িয়ে দেননি তাঁরা।
যদিও বিজেপির অন্দরের খবর, সেই বিবাদ কোনও একটা বিষয় নিয়ে হয়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। বিজেপির একটি অংশের দাবি, রাজ্যের সংগঠনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন দিলীপ এবং রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা ‘কাজের লোকেদের’ নিস্ক্রিয় করে রেখে ‘কাছের লোকেদের’ সংগঠনে জায়গা করে দিচ্ছেন।
এরইমধ্যে মুকুল অনুগামীরা দাবি করেন, দিল্লির ১৮১ সাউথ অ্যাভিনিউয়ে মুকুলের বাসভবনে ‘ঝড়’ এসেছিল। তার জেরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের হোর্ডিং উড়ে গিয়েছে। সেই খবরের পরে মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা নয়া মাত্রা পায়।
মুকুলের মতো নেতাকে হাতছাড়া করতে অনিচ্ছুক ছিল বঙ্গ বিজেপির একটি অংশ। তাঁরা মুকুলের ‘মানভঞ্জন’-এর চেষ্টা করেন। কয়েকদিন তর সইতে বলেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃৃত্বের কাছে মুকুলের হয়ে তদারকি করেন তাঁরা। সেই দলে ছিলেন নরেন্দ্র মোদীর ‘স্নেহভাজন’ রাজ্যের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যসভার এক বাঙালি সাংসদ।
যদিও সব জল্পনাকে ‘বানানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে উল্লেখ করে গত ২৬ জুলাই মুকুল বলেন, ‘আমি বিজেপির সঙ্গে আছি। আমি বিজেপি ছাড়ব বলে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছেন।’
পাশাপাশি বিজেপি সূত্রে জানা যায়, দিলীপের সঙ্গে দ্বৈরথ মেটাতে মুকুলকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন অমিত শাহ। যদিও পরে মুকুল দাবি করেন, ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এ তিনি দিল্লি যাচ্ছেন।
তারইমধ্যে গত শুক্রবার শাহের সঙ্গে দেখা করেন নরেন্দ্র মোদীর ‘স্নেহভাজন’ এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যসভার এক সাংসদ, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে আসা এক সাংসদ এবং দক্ষিণবঙ্গের এক সাংসদ। বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে শাহের কাছে নালিশ ঠুকলেন বাংলার চার সাংসদ।
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ সাফাই দেন, ‘যারা নিজেদের দল সামলাতে পারছে না, তারাই বিজেপির সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপিতে কোনও বিভেদ নেই, ভুল বোঝাবুঝি নেই।’ যে রিপোর্ট নিয়ে তাঁর সঙ্গে মুকুলের ‘বাদানুবাদ’ হয়েছে বলে ‘জল্পনা’ ছড়িয়েছে, সেরকম কোনও রিপোর্টই নাকি পেশই করা হয়নি বলে দাবি করেন দিলীপ। পাশাপাশি দু'সপ্তাহ আগে মুকুলের ফেরার কারণ হিসেবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বললেও সোমবার দিলীপ জানান, ‘চোখের জরুরি চিকিৎসা’-র কারণে ফিরেছিলেন মুকুল। তা নাকি মুকুল বলেছিলেন।
দিলীপের সেই 'সাফাই' ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নয়া জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, তাহলে কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকেই দিলীপকে কোনও ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছে? আর তারপরেই দিলীপের এই ভোলবদল?
‘সব ঠিক আছে’ তত্ত্বে জোর দিয়ে দিলীপ জানান, বাবুল তাঁকে জন্মদিনে ফোন করেছিলেন। এমনকী দলের অন্দরের কোন্দলের খবর নিয়ে তাঁরা হাসিঠাট্টা করেছেন।