দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদী জঙ্গিরা। নিহত হয়েছিলেন ২৪জন ইএফআর জওয়ান। প্রতিবছর এই ১৫ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন?
অত্যন্ত পরিকল্পিত হামলা হয়েছিল সেদিন। একেবারে হাড়হিম করা। সেদিন দুপুর নাগাদ টহলদারি সেরে কিছুটা ক্লান্ত হয়েই ক্য়াম্পে ফিরেছিলেন জওয়ানরা। আর সেই সময়টাকেই বেছে নিয়েছিল মাওবাদীরা। সেই মাওবাদীদের দাপট জঙ্গলমহল জুড়ে। জঙ্গলে তাদের ডেরা। আচমকাই সেই ক্যাম্পে এসেছিল নাচনি সেজে কয়েকজন। খবর এমনটাই। সবজি বিক্রি করার নাম করে এসেছিল তারা। আসলে তারা ছিল মাওদের মহিলা স্কোয়াডের এজেন্ট। তারা এসেছিল ক্যাম্পে প্রবেশের ও বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখতে। ক্যাম্পে রেইকি করেছিল তারা।
এরপর বিকেল সাড়ে তিনটে। জওয়ানদের রাতের রান্নার প্রস্তুতি চলছে। কয়েকজন জওয়ান বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ২৫-৩০জনের মাওবাদীদের একটা গ্রুপ আচমকা হামলা চালায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথমেই ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। প্রথমদিকে কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলেন জওয়ানরা। তবে দ্রুত জওয়ানরা পজিশন নিয়ে নেন। কিন্তু তার আগেই মাওবাদীরা আগুন ধরিয়ে দেয় ক্যাম্পে। এবার পালটা গুলি চালাতে শুরু করেন জওয়ানরা। জওয়ানদের গুলিতে অন্তত ৫জন মাওবাদী নিহত হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। তবে সেই দেহ নিয়ে চলে গিয়েছিল মাওবাদীরা। সেই সঙ্গে ক্যাম্প থেকে অন্তত ৭৪টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তারা লুঠ করে।
ঘটনার খবর পেয়ে বিরাট বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। কিন্তু মাওবাদীরা বিস্ফোরকের ফাঁদ পেতে রেখে গিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। ধীরে ধীরে আগুন নেভে। একে একে উদ্ধার করা হয় জওয়ানদের দেহ।
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে আজও গলা শুকিয়ে আসে অনেকের। কার্যত সেদিন কাপুরুষের মতো হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। তাদের সেই ভয়াবহ হামলাকে মেনে নিতে পারেননি কেউই। সেদিন জওয়ানদের উপর গুলি চালিয়ে ইনসাস, একে সিরিজের রাইফেল, কার্বাইন সহ প্রচুর অস্ত্র লুঠ করেছিল মাওবাদীরা। বাজারের মধ্য়ে স্বাস্থ্য়কেন্দ্র লাগোয়া ক্যাম্পে সেই হামলার ঘটনায় ২৩জন মাওবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
তবে আজ অনেকটাই বদলে গিয়েছে শিলদা। অনেকটাই জমজমাট হয়েছে। সেই মাও আতঙ্ক আজ আর নেই। বড় সাফল্য সরকারের। মানুষ আজ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। মাওবাদীরা আজ অতীত।