আরজি করের প্রভাব পড়ল না। দীর্ঘ আন্দোলন, মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষের রাস্তায় নামা তার কোনও ছাপই পড়ল না বাংলার উপনির্বাচনে।
তবে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল উত্তরবঙ্গের দুটি আসন। সিতাই ও মাদারিহাট। এই দুটি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সিতাই আসনে তৃণমূল যে নিশ্চিতভাবে জিতবে এটা নিয়ে কোথাও কোনও সংশয় ছিল না। এমনকী বিরোধীরাও কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন সিতাই কেন্দ্রে। সিতাই:
সেই সিতাই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৫৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সঙ্গীতা। তবে আসল লড়াইটা লড়েছেন তাঁরই স্বামী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। ভোটের আগে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র কার্যত চষে ফেলেছিলেন তিনি। কাঁটা বলতে একটাই ছিল সিতাইয়ের কিছু গ্রামে তৃণমূলের অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা। তবে ভোটের দিন যত এগিয়েছে ততই সব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলেছিল তৃণমূল। অন্যদিকে বিজেপি নড়বড়ে সংগঠন নিয়ে লড়তে পারেনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গেই কার্যত ভোটে লড়ার আগেই মনোবল একেবারে ভেঙে গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের। আর ভোটের ফলাফলে তারই প্রতিফলন।
সিতাইয়ের পাশে দিনহাটা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের খাসতালুক। তবে ভোটের ফলাফলে দেখা গেল কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেননি নিশীথ। কার্যত সবুজ ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল বিজেপি।
মাদারিহাট:
মাদারিহাটে ৩০ হাজার ৩০৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। এই আসনটি নিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষীণ আশা ছিল বিজেপির। কিন্তু জেতা আসনও হাতছাড়া হল বিজেপির।বাস্তবে দেখা গেল এখানেও ধরাশায়ী বিজেপি। চা বলয় থেকেও এবার মুছে যেতে বসেছে গেরুয়া প্রভাব।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মাদারিহাট বিজেপি নেতা মনোজ টিগ্গার খাসতালুক। তিনি জোরদার প্রচারও করেছিলেন। কিন্তু গলার কাঁটার মতো বিঁধছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার বেসুরো কথাবার্তা। এবারের ভোটে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়েছিলেন জন। সেই সঙ্গেই চা বলয়ে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বার বার প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিকে এবারে ভোটের দিনও বোঝা গিয়েছিল ভেতরে ভেতরে কতটা ফোঁপড়া হয়ে গিয়েছে বিজেপির সংগঠন। ভোটের দিনও ভোট মেশিনারির পুরোটাই কার্যত তৃণমূলের কাছে। সেই দাপটের কাছে দাঁড়াতে পারেনি বিজেপি।
২০১৮ সাল থেকেই উত্তরবঙ্গে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল বিজেপি। একাধিক ভোটের ফলাফলে তার প্রতিফলন হয়েছিল।কিন্তু যত দিন গিয়েছে ততই দেখা গিয়েছে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বিজেপি। তারই প্রমাণ মিলল এবারের ভোটে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উন্নয়ন আর অপরদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের শৃঙ্খলা তার জেরেই এই ফলাফল।
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রচারে গিয়েই বুঝেছিলাম। তবে মাদারিহাট নিয়ে কিছুটা আশা ছিল। কিন্তু ওখানেও ফল ভালো হয়নি।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা বলেন, কলকাতা থেকে সংগঠন চালালে ফল এমনই হবে।