ঘরে অভাব। আর্থিক অনটনে জেরবার সংসার। তাই স্বামীর নির্দেশেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিচারিকার কাজ করতে নেমেছিলেন স্ত্রী। স্বামীর পাশে দাঁড়াতে এভাবেই সংসারের হাল ধরেছিলেন। বাড়ি বাড়ি কাজ করে ফিরতে তাই রাত হয়ে যায়। তাই স্ত্রীয়ের চরম অত্যাচারের অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। নির্মমভাবে হাতুড়ি–শাবল দিয়ে মারধর করা হল গৃহবধূকে। এমনকী আটকে রেখে জলটুকুও খেতে দেওয়া হল না। চরম অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আর মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন বৃদ্ধ বাবা। জামাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলেন না তিনিও! নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানার উত্তরভাগ দক্ষিণ পাড়ায়। শিউরে উঠলেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, স্ত্রীর উপর পরকীয়া সন্দেহে নিত্যদিন অত্যাচার করতেন স্বামী আশিস প্রামাণিক। স্ত্রী অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়েছেন, এই ধারণা নিয়েই নিয়মিত চলত নির্যাতন। এবার সেই অত্যাচার চরম আকার নিল। এমনকী বেধড়ক মারধর করে স্ত্রীকে আঘাত করা হয়। ঘরের মধ্যে আটকে রাখার অভিযোগ উঠে। স্ত্রীয়ের বাপের বাড়ির লোকজন এলে তাঁদের দিকেও তেড়ে গেলেন জামাই!
মথুরাপুরের অসীমা হালদারের সঙ্গে বারুইপুর উত্তর ভাগের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা আশিস প্রামাণিকের সঙ্গে প্রায় বছর ১৫ আগে বিয়ে হয়। তাঁদের একটি ১৪ বছরের কন্যা সন্তানও আছে। পেশায় কলের মিস্ত্রি আশিস। কিন্তু করোনার জেরে লকডাউনে আর্থিক অনটন দেখা দেয় পরিবারে। তখন স্ত্রীকে পরিচারিকার কাজ করতে পাঠান স্বামী। তখন থেকেই অশান্তি শুরু। কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বললেই স্ত্রীর ওপর সন্দেহ করতেন আশিস। অসীমা কাজের সুবিধার জন্য মোবাইল ফোন কিনেছিলেন। তা নিয়ে সন্দেহ হয় আশিসের। রোজ বাড়িতে ঝগড়া, অশান্তি চলত। মারধোর নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল অসীমার।
অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে শাবল, চেলাকাঠ দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেন আশিস। হাতুড়ি দিয়েও মারেন! বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি আটকে দেন আশিস। একটু জল পর্যন্ত দেননি। প্রতিবেশীদের মারফত অত্যাচারের খবর পেয়ে মথুরাপুরের বাপের বাড়ি থেকে অসীমার বাবা মহাদেব হালদার ও ভাই মোহন ছুটে আসেন। এসে দেখেন তখনও বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আটকে রেখেছে মেয়েকে!
তখন উদ্ধার করতে যান বাবা ও ভাই। অভিযোগ, ছুটে আসেন জামাই আশিস প্রামাণিক। হুমকি, মারধর দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা ছুটে যান থানায়। অবশেষে মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বারুইপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবা মহাদেব। জামাইয়ের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বারুইপুর থানার পুলিশ।