উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত এখনও শুকায়নি, তারই মধ্যে নতুন আতঙ্কে কাঁপছে একের পর এক গ্রাম। বন্যার জলের সঙ্গে জঙ্গলের সীমারেখা ভেঙে এখন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। গত কয়েকদিনে গন্ডার ও বুনো শুয়োরের হামলায় ইতিমধ্যেই প্রাণহানি ও বহু মানুষ আহত হওয়ায় চিন্তিত প্রশাসন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে শুক্রবার সকালে বুনো শুয়োরের হামলায় অন্তত নয় জন গ্রামবাসী গুরুতরভাবে আহত হন।
আরও পড়ুন: জঙ্গলমহলে বাড়ছে হাতির তাণ্ডব, সংঘাত ঠেকাতে বৈঠকে বন দফতর, বহু পরিকল্পনায় জোর
জানা যাচ্ছে, ভোরের আলো ফোটার পরেই গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের বামনটারি এলাকায় দেখা যায় এক বুনো শুয়োর ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। প্রথমে এক বাড়িতে ঢুকে এক ব্যক্তিকে কামড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর রাস্তায় থাকা আরও দু’জনের উপর হামলা চালায়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, শুক্রবার সকাল প্রায় ১০টার সময় আবারও ঝাড় আলতাগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খট্টিমারি এলাকায় দেখা যায় একই শুয়োর। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবার একের পর এক ছ’জনকে আক্রমণ করে এবং একটি গরুকেও মেরে ফেলে প্রাণীটি।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে একের পর এক হামলা চালায় বুনো শুয়োর। খবর পেয়ে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ ও বন দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। বনকর্মীদের সঙ্গে একটি কুনকি হাতি নিয়ে এলাকায় শুরু হয় নজরদারি।
মোরাঘাট রেঞ্জার চন্দন ভট্টাচার্য জানান, বন্যপ্রাণীর গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুয়োরটিকে ধরার চেষ্টা চলছে।এদিকে একই দিনে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি বাজারের সুভাষপল্লিতে গন্ডারের হামলায় দু’জন গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন বিভা কর ও দিলীপ দাস। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভোরবেলা বিভা কর ফুল তুলতে গিয়েছিলেন বাড়ির পাশে। তখনই জঙ্গল থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসে গন্ডারটি এবং তাঁকে আক্রমণ করে। পরে দিলীপ দাসকে লক্ষ্য করে গন্ডারটির দ্বিতীয় হামলা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বন দফতরের আধিকারিকরা, কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে। মাইকিং করে এলাকা ফাঁকা করা হয় এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে অপারেশন চালিয়ে গন্ডারটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি দিয়ে কাবু করা হয়। পরে সেটিকে উদ্ধার করে ফেরত পাঠানো হয় চিলাপাতা জঙ্গলে।