বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মেটানোর জন্য হাতে আর সপ্তাহদুয়েক মতো ছিল। তার আগে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে আবারও বকেয়া ডিএ নিয়ে তৈরি হল আইনি জট।
একনজরে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আইনি জট -
১) ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্যাট জানিয়েছিল, মহার্ঘ ভাতা দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করছে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের দুটি সংগঠন।
২) ২০১৮ সালের অগস্টে স্যাটের রায় খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, রাজ্যের মর্জির উপর নির্ভর করে না মহার্ঘ ভাতা। তা সরকারি কর্মচারীদের অধিকার।
৩) গত বছর ২৬ জুলাই স্যাট নির্দেশ দেয়, ক্রেতা মূল্যসূচকের উপর ভিত্তি করে বাংলার সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দিতে রাজ্য সরকারকে। তার ভিত্তিতে কত ডিএ বকেয়া আছে, তা তিন মাসের মধ্যে ঠিক করতে হবে। তারপর ছ'মাসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ উপযুক্ত হিসেব কষে ছ'মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে।
একইসঙ্গে স্যাট নির্দেশ দিয়েছিল, যে পরিমাণ ডিএ বকেয়া আছে, তা এক বছরের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত যে পরিমাণ বকেয়া মহার্ঘ ভাতা আছে, তা মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তারইমধ্যে রায় পুুনর্বিবেচনার আর্জি দাখিল করে রাজ্য সরকার।
৪) চলতি বছর জুলাইয়ে রাজ্যের পুুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেয় স্যাট। তার ফলে এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদেরও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার প্রশস্ত হতে চলেছে বলে ধারণা করেছিলেন অনেকে।
তবে একটি অংশের ধারণা ছিল, সম্ভবত আবারও আইনি পথে হাঁটতে পারে রাজ্য সরকার। সেই সময় নবান্ন সূত্রে খবর মিলেছিল, স্যাটের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়া হতে পারে। বিশেষত রাজ্যের হাতে টাকা না থাকায় সেই পথে হাঁটা হতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হয়েছিল।
৫) ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার পরও বকেয়া ডিএ না মেটানোয় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছিল কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-সহ সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। সেই মামলায় স্যাট নির্দেশ দিয়েছিল, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে।
৬) তারইমধ্যে রাজ্যের নয়া মুখ্যসচিব হন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মচারী সংগঠনগুলির সূত্রে জানানো হয়েছিল, সেজন্য সংশোধিত আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। স্যাটের পরিষদে দায়ের করা মামলাটি আগামী বছর ২০ জানুয়ারি শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছিল।
৭) তার আগেই অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করল রাজ্য সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘভাতা মেটানোর জন্য রাজ্যের হাতে এখনও দু'সপ্তাহের বেশি সময় আছে। কিন্তু রাজ্য নতুন করে মামলা দায়ের করায় স্যাটের নির্দেশ মতো ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিএ মিলবে কিনা, তা নিয়ে ধন্দে আছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।