শ্রেয়সী পাল
লকডাউনের মধ্যেই মঙ্গলবারই বিড়ি বাঁধার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, বিড়ি বাঁধা বন্ধ থাকায় বহু মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তার পর দিনও মুর্শিদাবাদে শুরু হল না বিড়ি বাঁধার কাজ। বিড়ি কারখানার মালিকরা জানিয়েছে, ভিন রাজ্যে ট্রাক চলাচল শুরু না হলে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার ১৫ লক্ষ মানুষ বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কিছু কিছু এলাকায় পুরো পরিবার বিড়ি শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। শুধু জঙ্গিপুর মহকুমাতেই রয়েছে ১০০-র বেশি বিড়ি কারখানা। প্রতি ১,০০০ বিড়ি বাঁধলে ১৫২ টাকা করে পান বিড়ি শ্রমিকরা। বিড়ি বাঁধার যাবতীয় সামগ্রী দেয় কারখানার মালিক। গ্রামে গিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের কাছ থেকে বিড়ি সংগ্রহ করেন মুন্সিরা। বুধবার তাঁদেরও দেখা মেলেনি। যাতে হতাশ বিড়ি শ্রমিকরা।
পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত বিড়ির ৯৫ শতাংশই চলে যায় ভিনরাজ্যে। তাই ট্রাক চলাচল শুরু না হলে বিড়ি বাঁধা শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিড়ি কারখানার মালিকরা। বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠনের নেতা আবু হাসনত খান জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় মাত্র ১ শাতংশ বিড়ি শ্রমিকের উপকার হবে। সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী ভাবেননি যে এরাজ্যের সমস্ত বড় বিড়ি কারখানায় তৈরি বিড়ি ভিনরাজ্যে চলে যায়। ট্রেন, ট্রাক বন্ধ থাকায় এখন বিড়ি বাইরে পাঠানো সম্ভব নয়। তাছাড়া বড় কারখানাগুলিতে ২৫০ জন মতো শ্রমিক কাজ করেন। সোশ্যাল ডিসট্যাংসিং মেনে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়।
বিড়ি কারখানার মালিক নিপনজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তামাক ও কেন্দু পাতা রয়েছে। কিন্তু বিড়ি সেঁকার জন্য রোজ কয়লা চাই। এছাড়া প্যাকেজিংয়ের জন্য লেবেল, সুতো দরকার। তাছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বিড়ি মজুত করে রাখলে তার মান খারাপ হয়ে যায়। মাল যদি বেচতেই না পারি তাহলে বানিয়ে কী করব?’
জঙ্গিপুরের তৃণমূলি সাংসদ তথা নামি বিড়ি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ভিনরাজ্যে বিড়ি পাঠানো সম্ভব নয়। তাই বিড়ি তৈরি করাও যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমরা এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছি।’