প্রথমে প্রেমের জালে ফাঁসানো তারপর নারী পাচার। রাজ্য–ভিনরাজ্য থেকে বিদেশের যৌনপল্লীতে বিক্রি করা হয় নারীদের। এবার এই পাচার হওয়া তারকেশ্বরের নাবালিকাকে বিহার থেকে উদ্ধার করতেই আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের পর্দাফাঁস হয়ে গেল। আর তা করল হুগলি গ্রামীণ পুলিশ। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ, রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রথমে কথা বলা, তারপর দেখা করা এবং পরে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হতো। তবে তিনজনকে কলকাতা, অশোকনগর এবং বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৯ জুলাই তারকেশ্বর এলাকা থেকে এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়। গত ১৩ জুলাই তারকেশ্বর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন নাবালিকার পরিবার। তারপরই তদন্তে নেমে ওই নাবালিকাকে বিহার থেকে উদ্ধার করে গত ১৯ জুলাই ফিরিয়ে আনা হয়। আর গ্রেফতার করা হয়—মিজানুর মণ্ডল, শ্রীরাম রায়, নন্দকিশোর কুমার। মিজানুর মণ্ডলের বাড়ি অশোকনগর, শ্রীরাম রায়ের বাড়ি কলকাতার তারতলা এবং নন্দকিশোর কুমারের বাড়ি বিহারের চম্পারণে। ওই নাবালিকাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের ‘ফাঁদ’ ফেলে ফাঁসানো হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের কবলে পড়েছে সে। তখন তাদের পাকড়াও করতে ফাঁদ পাতে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। আর তাতেই মেলে সাফল্য।
আরও পড়ুন: ‘দানা’র দাপটে চাষের ব্যাপক ক্ষতি, শুরু হচ্ছে দুয়ারে শিবির, শস্য বিমার আবেদন গ্রহণ
এই একটা ঘটনা থেকে আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেই ওই নাবালিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তারপর তার সঙ্গে সহবাসও করা হয়। তারকেশ্বর থেকে বিহারে নিয়ে আসে নাবালিকাকে মিনাজুর মণ্ডল। পুলিশ লোকেশন ট্র্যাক করে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে ফেলে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে। এই ঘটনার সঙ্গে নারী পাচার চক্রের যোগ রয়েছে। প্রেমের ফাঁদের পাশাপাশি কাজের টোপ দিয়ে মহিলা ও নাবালিকাদের ভিন রাজ্যের যৌনপল্লীতে পাচার করত তারা। এমনকী বাংলার মেয়েকে বিদেশে পর্যন্ত পাচার করে টাকা কামিয়েছে এই তিনজন বলে অভিযোগ।
এছাড়া নন্দকিশোর কুমারের একটি নাচের দল আছে। যার আড়ালে ‘সেক্স র্যাকেট’ চলে। সেখান থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই তিনজন নেপালে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা পুলিশের তৎপরতায় ভেস্তে যায়। নেপালে আগেও এরা নারীপাচার করেছে। তাই জায়গাটি তাদের চেনা। এই নারীপাচার চক্র কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মিজানুর মণ্ডল ও শ্রীরাম রায় প্রেমের ফাঁদ ফেলে নারী জোগাড় করত। আর নন্দকিশোর কুমারের হাতে তুলে দিত বলে অভিযোগ।