করোনার চোখরাঙানির মধ্যেও বাংলায় ঘটেছে রাজনৈতিক সঙ্ঘাত। চিঠির পর চিঠিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিবাদে মেতেছেন রাজ্যপাল। কেন্দ্র–সঙ্ঘাত দ্বন্দ্বও ওঠে চরমে। ধেয়ে এসেছে আমফান। ঘরে বসেই কেটেছে পুজো। চলেছে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো। পাহাড়ে ফিরেছেন বিমল গুরুং। তৃণমূল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। নানা রঙের ২০২০— ছবিতে।
1/7বিধ্বংসী আমফান : আগে থেকেই খবর ছিল। তৈরি ছিল বাংলা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমফান তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ধেয়ে এসে তছনছ করে দিয়ে চলে যায় পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম থেকে শহর। বিধ্বংসী ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। কলকাতাতেই এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার। ‘লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে’ বলে মাথায় হাত পড়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারি হিসেবে ২৯ মে পর্যন্ত ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ঝড়ের তাণ্ডবে। ১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ১০ লক্ষেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জল ও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। ২০ মে হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের চিহ্ন রয়ে গিয়েছে এখনও। ছবি সৌজন্য : পিটিআই (PTI)
2/7কনটেনমেন্ট দুর্গাপুজো : পুজোমণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’। নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ঘরে বসেই কাটাতে হবে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। করোনা সংক্রমণ রুখতে এমনই রায় আদালতের। করোনার দাপটে পিছিয়ে এলেন কিছু ছোট পুজোর উদ্যোক্তা। তবে বড় পুজোগুলো কমবেশি ভাল করেই অনুষ্ঠিত হল। কিন্তু মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, রাজ্যের সমস্ত মণ্ডপই কনটেনমেন্ট জোন। মণ্ডপে সর্বোচ্চ ৪৫ জন থাকতে পারবে। আর তা দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়ল পুলিশের কাঁধে। দূর থেকেই প্রতিমা দেখে মণ্ডপ ছাড়তে হবে দর্শনার্থীদের। শারীরিক দূরত্ব মানতে হবে। এবার পুজোর রাতে কলকাতায় ছিল না কোনও কোলাহল। রাস্তা ফাঁকা বললেই চলে। বিসর্জনও আড়ম্বরহীন। রাস্তায় কম আলো। এমন পুজো আগে দেখেনি রাজ্যবাসী। একইরকম নির্দেশ ছিল কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজোর ক্ষেত্রেও। ছবি সৌজন্য : পিটিআই (PTI)
3/7শুভেন্দুর পালাবদল : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনীতিতে ২০২০ সালের বেশিরভাগটা জুড়েই ছিল একজনের নাম। তিনি হলের রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। জুলাই মাস থেকেই সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে অরাজনৈতিক সভায় দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও গরহাজির থাকছিলেন শুভেন্দু। বক্তৃতায় না শোনা যাচ্ছিল তৃণমূল দলের নাম আর না দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। দল ছাড়ছেন নাকি নতুন দল গড়ছেন, জল্পনা বাড়তেই থাকে। ১০ নভেম্বর, নন্দীগ্রামে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানমঞ্চে শুভেন্দু হুঙ্কার দেন, ‘‘লড়াইয়ের মাঠে দেখা হবে। দেখা হবে রাজনীতির মঞ্চে।’ তখনও এটা কারও জানা ছিল না যে সেই রাজনীতির মঞ্চ হবে বিজেপি–র মঞ্চ। একে একে বিভিন্ন সরকারি পদ, মন্ত্রিত্ব, বিধায়ক পদ ও তৃণমূল দল থেকে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহয়ের হাত ধরে বিজেপি–তে যোগ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি সৌজন্য : এএনআই
4/7কেন্দ্র–রাজ্য টক্কর : এই বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলল কেন্দ্র–রাজ্য সঙ্ঘাত। করোনা রুখতে রাজ্যের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে শুরু করে বছর শেষে বাংলার ৩ আইপিএস অফিসারের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের দাবি— সবেতেই কেন্দ্র–রাজ্যের বোঝাপড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে বাংলায় ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না— এই অভিযোগ তুলে একাধিকবার পর্যবেক্ষকদের বিশেষ দল রাজ্যে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। লকডাউনের বিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল্লি–নবান্ন পত্রযুদ্ধও লেগেছে বেশ কয়েকবার। আমফান মোকাবিলায় ১০০০ কোটি টাকা অর্থ সাহায্যের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। যা ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় কিছুই নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। রেশনের চাল, শ্রমিক রেল নিয়েও দেখা দেয় রাজ্য–কেন্দ্র সঙ্ঘাত। বিজেপি–র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় রাজ্যের ৩ আইপিএস আধিকারিকের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশন চাওয়ায় সেই সঙ্ঘাত পায় নতুন মাত্রা। ফাইল ছবি
5/7রাজ্য–রাজ্যপাল সঙ্ঘাত : ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন জগদীপ ধনখড়। আর তার পর থেকেই শুরু হয় তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্ঘাত। চলেছে বহু পত্র–যুদ্ধ। সঙ্ঘাত এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনখড়কে প্রত্যাহারের দাবি করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের পুলিশ–প্রশাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে প্রায় প্রত্যেক দিনই টুইট করে এসেছেন তিনি। রাজ্যের আমলাদের ‘রাজনৈতিক চাকর’ হিসেবেও কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্য সরকারের শিল্প সম্মেলনের খরচ, জিটিএ–র অডিট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিজেপি–র নবান্নে অভিযানে পাগড়ি বিতর্ক বা বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনার রাজ্যের দিকে আঙুল তুলেছেন রাজ্যপাল। তাঁর অভিযোগে একাধিকবার উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বাংলার মানুষদের বঞ্চিত করার কথা। সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফিরে গোটা নভেম্বর মাস পাহাড়ে কাটিয়েছেন তিনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হোক, এটাই এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। একাধিক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল ছবি
6/7ছুটল ইস্ট–ওয়েস্ট : চলতি বছরে কলকাতা শহরের ‘লাইফলাইন’ মেট্রোয় হয়েছে একাধিক নতুন কাজ। দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রস্তুতির পর ১৩ ফেব্রুয়ারি চাকা গড়ায় ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর। প্রথম ধাপে সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয়। মাঝের স্টেশনগুলি হল করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার ও বেঙ্গল কেমিক্যাল্স। পরে আবার চালু হয় ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনও। যা ভূগর্ভস্থ স্টেশন। কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে প্রায় ২৫ বছর পর নতুন কোনও ভূগর্ভস্থ স্টেশন চালু হল ফুলবাগানের হাত ধরে। মেট্রোর আর এক উল্লেখযোগ্য কাজ চালু হয়েছে এ বছর। আত্মহত্যা রুখতে এই ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর সব স্টেশনে বসানো হয়েছে স্ক্রিন ডোর। স্টেশনে যতক্ষণ ট্রেন থাকবে না ততক্ষণ বন্ধ থাকবে এই স্ক্রিন ডোর৷ এর জেরে কেউ লাইনে নামতে বা ঝাঁপ দিতে পারবে না৷ ট্রেন ঢুকলেই কামরার দরজা এবং স্ক্রিন ডোর একসঙ্গে খুলবে৷ একইসঙ্গে প্রতিটি স্টেশন অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আনা হয়েছে উন্নতমানের রেকও। উল্লেখ্য, সম্প্রতি নোয়াপাড়া–দক্ষিণেশ্বর রুটেও হয়ে গিয়েছে ট্রায়াল রান। ছবি সৌজন্য : পিটিআই (PTI)
7/7পাহাড়ে গুরুং : বছর শেষের শীতে রাজনীতির উত্তাপ বাড়ছে পাহাড়ে। আর তার সূত্রপাত হয় ২১ অক্টোবর। প্রায় তিন বছর লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে পুজোর মরশুমে হঠাৎ কলকাতায় এসে হাজির হন দেশদ্রোহিতার আইনে অভিযুক্ত বিমল গুরুং। আর তিনি দেখা দিয়েই বিজেপি–র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূলের হাত ধরার প্রস্তাব দেন। বলেছেন, ‘আমরা চাই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই মমতাকে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে চাই।’ আর তার পরই তিনি ফিরেছেন পাহাড়ে। শিলিগুড়ির পর দার্জিলিংয়েও সভা করেছেন তিনি। আর তাতেই বেড়েছে মোর্চার বিমল গুরুং শিবির ও বিনয় তামাং শিবিরের সঙ্ঘাত। বিনয় তামাং–অনিত থাপা শিবিরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন গুরুং। আর একইসঙ্গে পাহাড় জুড়ে বিমল বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মিছিল, মিটিং, পথসভা থেকে সেই ছবিই উঠে আসছে। ভোটের আগে পর্যন্ত আরও পালাবদলের আশঙ্কা রয়েছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। ছবি সৌজন্য : পিটিআই (PTI)
অন্য গ্যালারিগুলি
No Network
Server Issue
Internet Not Available
Wait for it…
Log in to our website to save your bookmarks. It'll just take a moment.