আর জি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা যে সময় ঘটেছিল, সেই সময় যিনি সংশ্লিষ্ট টালা থানার ওসি ছিলেন, শনিবার রাতে তাঁকেই গ্রেফতার করে সিবিআই। তাহলে কি সেই কারণেই আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে ভেস্তে গেল মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বৈঠক?
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪), অর্থাৎ আর জি কর কাণ্ডে প্রথম 'মেয়েদের রাত দখল' কর্মসূচির ঠিক একমাসের মাথায় আবারও একবার যে রাত দখলের কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছিল, তেমনই একটি আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের কালীঘাটের বৈঠক ভেস্তে যাওয়া নিয়ে উপরোক্ত সম্ভাবনাটি নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেল!
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থানস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই সরকার পক্ষের তরফ থেকে আবারও একবার বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন আন্দোলনকারীরা। স্থির হয়, শনিবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ।
শনিবার রাতের এই বৈঠকের দিকে সারা বাংলার নজর থাকলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৈঠক হয়নি। যার প্রকাশ্য কারণ, সেই লাইভ স্ট্রিমিং এবং পরবর্তীতে বৈঠকের ভিডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে দু'পক্ষের মতের অমিল!
কিন্তু, মানুষ কি এই যুক্তি মানছে? শনিবারের বৈঠক বাতিল হওয়ায় প্রাথমিকভাবে যাঁরা হতাশ ছিলেন, টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারির খবর আসতেই তাঁরা ফের একবার চাঙ্গা হয়ে উঠলেন! প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে অভিজিৎ ছাড়াও আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সন্দীপ ঘোষকেও গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, এত দিন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ছিলেন আর জি করের এই প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
এদিকে, শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড়, দমদমের নাগের বাজার মোড়, সিঁথির মোড়, সেভেন ট্যাঙ্কস মোড়, যাদবপুর এইট বি মোড়-সহ কয়েকটি এলাকায় রাত দখলের জমায়েত হয়। তাতে কয়েকশো মানুষ সামিল হলেও আগের জমায়েতগুলির তুলনায় ভিড় কিছুটা কম ছিল।
শনিবারের এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনার প্রধান বিষয়ই ছিল কালীঘাটে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ। তাঁদের মতে, সিবিআইয়ের হাতে অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারি একটা বড় পদক্ষেপ। আন্দোলনকারীদের অনেকেই বলছেন, আর জি কর কাণ্ডে যে প্রমাণ লোপাটের অপচেষ্টা হয়েছে, সেটা এই গ্রেফতারি থেকেই স্পষ্ট।
কেউ কেউ আবার আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, আসলে টালা থানার প্রাক্তন ওসির গ্রেফতারিতে প্রশাসনের অন্দরে এবং শীর্ষে থাকা সেইসব ব্যক্তিরা ভয় পেয়ে গিয়েছেন, যাঁরা আর জি করের ধর্ষণ-খুন এবং দুর্নীতির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িত রয়েছেন! এই আলোচনাগুলিতে আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্ত, টালা থানার প্রাক্তন আধিকারিকের গ্রেফতারির ফলেই ভীত সরকার পক্ষ কালীঘাটের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে!
শনিবার রাত দখলের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া নারী-পুরুষদের এও বলতে শোনা গিয়েছে, তাহলে কি এবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পালা? এই ভাবনার প্রতিফলন প্রতিধ্বনিত হয়েছে একটি নয়া স্লোগানে - 'ওসি-র পর কার পালা/ভয় পেয়েছে চোদ্দোতলা'!