বিশ্বের অন্যতম তাবড় বায়োমেডিক্যাল গবেষণা বিষয়ক কেন্দ্র ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-র পরবর্তী ডিরেক্টর পদে বঙ্গসন্তান জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে বেছে নিয়েছেন খোদ মার্কিন ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তাবড় বঙ্গসন্তানের পৈতৃক বাড়ি হুগলির চন্দননগরের মধ্যাঞ্চলে।
হুগলি জেলার বহু বাসিন্দাই নাম শুনেছেন চন্দননগরের ইন্দুমতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের, সেই বিদ্যালয়, তৈরি হয়েছে জয়ন্ত ভট্টাচার্যের ঠাকুমা নীহারনলিনীদেবীর নামে। চন্দননগরের এক নামি পরিবারে জন্ম জয়ন্ত ভট্টাচার্যের। বাবা কর্মসূত্রে আমেরিকায় চলে গেলে, সেখানেই শৈশব কাটে জয়ন্তের। আর এবার মার্কিন মুলুকের গবেষণা বিষয়ক সংস্থা এনআইএইচ-র পরবর্তী ডিরেক্টর হচ্ছেন জয়ন্ত ভট্টাচার্য। তাঁর সম্পর্কে এমনই কিছু তথ্য উঠে আসে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র এক প্রতিবেদনে।
ছোটবেলা:-
বাবা বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য শিবপুর বিই কলেজের পিএইচডি। একটা সময় তিনি বড় ছেলে জয়ন্ত, ছোট ছেলে দ্বৈপায়ন, স্ত্রী মাধুরীকে নিয়ে মার্কিন দেশে যাত্রা করেন। সেখানেই জয়ন্ত, হয়ে ওঠেন ‘জয়’, আর পরে ‘জে’। নামের উচ্চারণ পাল্টালেও শিকড়ের টান ভোলেননি জয়ন্ত। তিন বছর বয়স থেকে আমেরিকা নিবাসী জয়ন্তর পিসতুতো বোন বলছেন, একবার 'পড়াশোনার জন্য প্যারিসে গিয়ে চন্দননগর নিয়ে গান শুনে সেটা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিল। চন্দননগর থেকে অনেক বাংলা বই কিনে নিয়ে গিয়েছিল।' এই কৃতী বঙ্গসন্তানের উচ্চশিক্ষাও বেশ চমকপ্রদ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মেডিসিনে এমডি করেন। পরে পিএইচডি করেন অর্থনীতিতে। বর্তমানে ব্যাপক ব্যস্ত মানুষ জয়ন্ত। তবে আত্মীয়দের ভোলেননি। এককালে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার কাজে জয়ন্ত গিয়েছিলেন মেদিনীপুরে। তখন তিনি চন্দননগরের বাড়িতেই থাকতেন। এখনও আত্মীয়দের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখেন তিনি।
কেমন মানুষ জয়ন্ত?
বইপ্রেমী জয়ন্তকে নিয়ে তাঁর খুড়তুতো ভাই তথাগত বলছেন, তথাগতর বেঙ্গালুরুর বাড়িতে একবার গিয়েছিলেন জয়ন্ত। সেখানে তথাগতর ছেলের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছিলেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে সেমিকন্ডাক্টার ক্ষেত্রে কর্মরত তথাগত বলছেন, জয়ন্ত ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। তিনি বলছেন,' দাদা যখন চন্দননগরের বাড়িতে এসেছেন, তখন আমি ছোট, আমাকে অঙ্ক শিখিয়েছেন।' আত্মীয়রা বলছেন, ছোট থেকেই জয়ন্ত শান্ত স্বভাবের। তাঁকে ঘিরে গর্বিত পরিবার, পরিজনরা।
পরিবার:-
জয়ন্ত ভট্টাচার্যের মেজ কাকা শ্রীপপতি শিবপুর বিই কলেজের বিটেক, লন্ডন থেকে এমটেক করে আমেরিকায় চলে যান। বড় কাকা উষাপতি, চন্দননগর আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ছোট কাকা শ্রীকুমার ভট্টাচার্য, দুর্গাপুরের আর ই কলেজ থেকে স্পাপত্যবিদ্যায় স্বর্ণপদকজয়ী। শ্রীকুমারের স্মৃতিতে চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের বিজ্ঞানবিভাগের ভবন তৈরি হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে বৃত্তি রয়েছে। সেই পরিবারের সন্তান এবার মার্কিন মুলুকের সরকার পোষিত বায়োমেডিক্যাল গবেষণা বিষয়ক কেন্দ্র ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-র পরবর্তী ডিরেক্টর। তাঁর হাত ধরে আরও গর্বের অধ্যায়ের অপেক্ষায় চন্দননগর, তথা বাংলা।