FLOOD LIKE SITUATION : কখনও ভারী, কখনও মাঝারি, তো কখনও ঝিরিঝিরি - নিম্নচাপের জেরে একটানা বৃষ্টিতে নাজেহাল দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। বহু জায়গাতেই ইতিমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির জল জমতে শুরু করেছে। তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে বাঁকুড়া, কিংবা বীরভূম থেকে হুগলি - সর্বত্রই ধরা পড়েছে একই ছবি। ভোগান্তি বাড়ছে আমজনতার, উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসনও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় টানা বৃষ্টিতে ধসে গিয়েছে নদীবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশে। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার নামখানা গ্রাম পঞ্চায়েতের মহারাজগঞ্জ এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে যে কোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করবে। আতঙ্কে সর্বক্ষণ বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা।
তাঁদের এই দুর্ভোগের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেই দায়ী করছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ এই নদীবাঁধটি বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। অথচ, সব জেনেও নির্বিকার প্রশাসন। এলাকাবাসীর সাফ কথা, মানুষের জীবন বাঁচাতে এবার অন্তত একটি মজবুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
যে বাঁকুড়া সাধারণত রুখা-শুখা থাকে, লাগাতার বৃষ্টিতে বিপদের আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারাও। আচমকা অতিবৃষ্টির জেরে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের জমা জল প্রবাহিত হয়ে ঢুকে পড়ছে হুগলির গোঘাটে। পাশাপাশি, দ্বারকেশ্বরের জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় আরামবাগ মহকুমা ভেসে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বৃষ্টির জমা জল রাস্তার উপর দিয়ে বইতে শুরু করায় কামারপুকুর-গড়বেতা ও কামারপুকুর-জয়রামবাটি রুটে আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এই এলাকাগুলি সড়কপথে পরস্পরের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
হুগলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারও। কারণ, প্রবল বৃষ্টিতে ঘাটালের মনসুকায় ঝুমি নদীর উপর কাঠের সেতুটি ভেঙে গিয়েছে। ফলে আশপাশের প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা পড়েছেন ঘোর বিপাকে। নদী পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রয়োজন মিটবে বলেই জানাচ্ছেন বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, লাল মাটির দেশ বীরভূমের অবস্থাও তথৈবচ। টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় সব নদীই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে অন্তত আড়াই হাজার কিউসেক জল ছাড়ার জেরে ময়ূরাক্ষীর জলস্তর মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে। সাঁইথিয়ার অস্থায়ী ফেরিঘাট ভেঙে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাঁইথিয়ার ভিতরে বিকল্প সেতু রয়েছে। ফলে শহরের ভিতরের অংশে যাতায়াত করা যাচ্ছে। কিন্তু, ফেরিঘাট অকেজো হয়ে যাওয়ায় সাঁইথিয়া থেকে ময়ূরেশ্বর, তারাপীঠ এবং বহরমপুর-সহ আশপাশের এলাকাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এদিকে, লাগাতার বৃষ্টিতে ঝাড়খণ্ডের ম্যাসেনজোর ব্যারেজ থেকেও জল ছাড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। সেটা হলে শহরবাসীর বিপদ আরও বাড়বে।