নির্মল বাংলা নিয়ে রাজ্য সরকারের এত প্রচার কি তাহলে বিফলে গেল? কারণ, কলকাতা হাইকোর্টে চরম ভর্ৎসিত হতে হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত দফতরকে। আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণ, রাজ্য প্রশাসন ঠিক মতো একটি শৌচালয়েরও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে না। তাই তাদের কাছ থেকে উন্নত সামাজিক পরিকাঠামো তৈরির আশাটুকুও করা যায় না!
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টে রুজু হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতেই উপরোক্ত পর্যবেক্ষণটি করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে জমা জলের সমস্যা নিয়ে জেরবার হাওড়ার জগাছা এলাকার বাসিন্দারা। সমস্যা সমাধানে এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ, সম্প্রতি যখন ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়, তখনও সেখানে জল জমে ছিল। অথচ, রিপোর্টে জল জমার কথা উল্লেখ করা হয়নি। বদলে তাতে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও জল জমে নেই!
সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলার নিরিখে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। যা পড়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। কলকাতা হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন আদালত চত্বরে একাধিক শৌচালয়ের বেহাল দশা নিয়ে এজলাসেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গোটা ঘটনায় বিচারপতি শিবজ্ঞানম অত্যন্ত কঠোরভাষায় নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যেদিন তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেদিনই আদালতের শৌচালয়ের শোচনীয় অবস্থা তাঁর নজরে পড়েছিল। কিন্তু, আজ পর্যন্ত সেই শৌচালয়ের হাল ফেরেনি। এমনকী, শিলিগুড়িতেও একই পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
তাঁর পর্যবেক্ষণ, পিডাব্লিউডি-কে কোনও কাজ করতে বললেই শুধু অজুহাত খাড়া করা হয়। সামান্য কাজকেও 'মেগা প্রজেক্ট' বলে দেগে দিয়ে 'প্রশাসনিক অনুমতি'র দোহাই দেওয়া হয়। এসবের জেরে আখেরে কাজটাই হয় না।
বিচারপতির মতে, যে সরকারি দফতর শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণের মতো সাধারণ দায়িত্ব পালন করতে পারে না, তারা জমি অধিগ্রহণ, দমকলের অনুমোদন আদায় বা সামগ্রিকভাবে উন্নত সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তুলবে, সেটা আশা করা যায় না।
সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানির পর সমস্যা সমাধানে জেলাশসককে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। অর্থ বরাদ্দ করা থেকে কোন দফতর এই কাজ করবে, সেসবই জেলাশাসকের মাধ্যমে জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি শিবজ্ঞানম। জানিয়ে দেন, এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ জেলাশাসককেই করতে হবে।