Mini Bangladesh Exclusive: ফুটের ধারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ বিক্রি করেন নিজামুল। কিন্তু দেখলে মনে হবে, সেই বিক্রির বারোটা বেজে গিয়েছে। কাস্টমার নেই। নেই কেন? নিজামুল বলে ওঠে, ‘বাংলাদেশের ঘটনা জানেন না? সেপ্টেম্বর থেকেই এই হাল। মহাজনের কাছে বেশ কিছু ধারবাকি হয়ে গিয়েছে। মাল বিকোচ্ছে না একদম।’ একই সুর ফুটপাতের এক খাবার বিক্রেতার গলায়। সন্ধ্যে হলেই গমগম করত চারপাশ। গত চার মাস একেবারে সুনসান। ইদানীং তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে দেন রিয়াজ।
পালাবদলের জের
স্থান মারকুইস স্ট্রিট। কলকাতার মৌলালি থেকে নোনাপুকুরের দিকে গেলে বামহাতে একটি রাস্তা পড়ে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই রাস্তা ধরে এগোলে পৌঁছানো যায় এক চৌমাথায়। চৌমাথা পেরোলেই শুরু মারকুইস স্ট্রিট। অনেকে বলেন কলকাতার বুকে মিনি বাংলাদেশ। কারণ আছে। বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতা আসেন, তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখানেই থাকেন। এখানকার ব্যবসায়ী নাগরিকরাও তথৈবচ। বাংলাদেশিদের আসা-যাওয়ার উপরে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে তাদের ব্যবসা। কিন্তু আগস্ট মাস থেকেই বদলে গিয়েছে গমগমে পথঘাটের চিত্রটা। বাংলাদেশের সিংহাসনের পালাবদল হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন ইউনূস। শেখ হাসিনা ‘পালিয়েছেন’ দেশ ছেড়ে। তারপর থেকেই।
কী বলছেন হোটেল মালিকরা
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট মিলিয়ে প্রায় ২০০-র বেশি হোটেল রয়েছে মিনি বাংলাদেশে। আগস্ট মাস থেকে তাদের বাজার মন্দা। কথা হচ্ছিল হোটেল আফসার মালিকের সঙ্গে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানালেন, ‘ব্যবসার ভীষণ খারাপ হাল। গত সেপ্টেম্বর থেকেই এখানে বাংলাদেশিদের আনাগোনা কমে গিয়েছে। ৪০ টা রুম আমাদের। ১০-১৫ টার বেশি রুম ভর্তি থাকে না কোনওসময়।’ এভাবে চলতে থাকলে অনেকের ব্যবসা উঠে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। স্পষ্ট আতঙ্কের সুর।
চিকিৎসার কারণেই শুধু আসছেন…
হোটেল গুলিস্তানের মালিক আবার দুষছেন টুরিস্ট ভিসা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে। তাঁর কথায়, ‘টুরিস্ট ভিসা উঠে যাওয়ার পর থেকে কাস্টমার অনেকটাই কমে গিয়েছে। আমাদের ব্য়বসার বেশিরভাগটাই চলে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে। এখন মেডিকেল ভিসা যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরাই এখানে আসছেন। কিন্তু তাতে পোষাচ্ছে না। কারণ এত হোটেল। সেই সংখ্যায় মানুষ খুব কম।’
রেঁস্তরায় কমেছে রান্নাবান্না
শোচনীয় অবস্থা শুধু যে হোটেলমালিকদের, তা নয়। সমস্যার ছবি স্পষ্ট বিভিন্ন রেঁস্তরায়। একটি নামজাদা রেঁস্তরার ওই অঞ্চলে ব্যবসা গত এক যুগ ধরে। রেঁস্তরার মালিকের কথায়, ‘এমন মন্দা এই প্রথম দেখছি। এর আগেও নানা সময় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। কিন্তু এতটা নয়।’ বাংলাদেশি স্টাইলে রান্নাবান্না থেকে সেখানকার সংস্কৃতিকে অনুকরণ করেও বেশ কিছু রেঁস্তরা এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ রেঁস্তরার দাবি, আইটেমের সংখ্যা কমে গিয়েছে, রান্না করে লাভ হয় না। যেকজন কাস্টমার আসেন, সাধারণ খাবারই বেশি খান বেশি পয়সা বাঁচাচ্ছেন অনেকেই। হতেই পারে মূল্যবৃদ্ধির জেরে!
ভয় লাগছে?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্তিতি বেশ উত্তাল। বর্ডারের দুইপারে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি করেছে চিন্ময় দাস প্রভুর গ্রেফতারি ও পরবর্তী ঘটনাক্রম। এপারে চিন্ময় দাস প্রভুর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সমগ্র পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বাড়ছে বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষমূলক পোস্ট। এই অবস্থায় নিজেদের কতটা নিরাপদ মনে করছে মিনি বাংলাদেশ? এক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস সংস্থার আধিকারিক হাফিজুলের কথায়, ‘গত চার মাসে ব্যবসা ডাউন হলেও ওরকম ভয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশে যা চলছে তা আমরাও মেনে নিচ্ছি না।’ হোটেল আফসার মালিক এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে দিলেন তাঁদের অবস্থান। ‘আমাদের কাছে হিন্দু-মুসলিম বলে আলাদা কিছু নয়। মানুষই শেষ কথা। অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এসব করে লাভ হবে না।’
বোঝাই যায়, মাছি তাড়ানোর হাল অনেকের। ফুটে যারা ব্যবসা করেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কারণ অনেকেরই আধপেটা খেয়ে কাটছে দিন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, চাইছেন সকলেই। পেট খালি থাকলেও সম্প্রীতির ধর্ম থেকে সরতে নারাজ তাঁরা!