মামাকে খুন করে এবার ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে ভাগ্নেকে। গত বছরের একটি ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল আদালত। জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ রিন্টু শূর এই রায় দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবকের নাম আফতাব হোসেন। তার বিরুদ্ধে নিজেরই মামাবাড়িতে ডাকাতি ও আপন মামাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাতেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে আফতাব।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলা রুজু করেছিলেন মৌমিতা দাস নামে এক গৃহবধূ। তিনি জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাসিন্দা। মৌমিতার স্বামীর নাম মেহতাব হোসেন। এই মেহতাবকেই ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছিল আফতাব। মৌমিতা স্বয়ং সেই ঘটনার সাক্ষী।
মামাবাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল মৌমিতার ননদের ছেলে আফতাব। যেদিন এই ঘটনা ঘটে, সেদিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে আলাদা ঘরে শুয়েছিলেন মৌমিতা। তাঁর স্বামী মেহতাব হোসেন দুই ছেলেকে নিয়ে অন্য ঘরে শুয়েছিলেন।
সেই রাতে একটা থেকে দেড়টার মধ্য়ে মোট ছ'জন মেহতাবের বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢোকে। সেই দলের পাণ্ডা ছিল আফতাব। দলে দু'জন মহিলাও ছিল। মেহতাব বাদে বাকিরা দিল্লি থেকে ডাকাতি করতে আসে বলে পরবর্তীকালে তদন্তে জানা যায়। ডাকাত দলের প্রত্যেকেই রান্নাঘরের জানলা দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকেছিল।
এদিকে, ডাকাতির বিষয়টি বুঝতে পেরেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মেহতাব হোসেন। সেই সময়েই আবতাব তাঁকে কুপিয়ে খুন করে। মৌমিতার সামনেই সেই ঘটনা ঘটে।
তিনি জানিয়েছেন, স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি। একের পর এক ধারাল অস্ত্রের কোপ খেয়ে ভাগ্নের হাতেই প্রাণ হারাতে হয় মেহতাবকে। গুরুতর জখম হন মৌমিতাও। শেষমেশ প্রাণ বাঁচাতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মরার মতো পড়ে ছিলেন তিনি। কোনও মতে বাঁচাতে পেরেছিলেন নিজের দুই সন্তানকে।
পরবর্তীতে মৌমিতা মামলা রুজু করেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। আদালত মেহতাবের ভাগ্নে আফতাবকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ফাঁসির সাজা শোনায়।
২০২৩ সালে যখন এই ঘটনা ঘটেছিল, স্বাভাবিকভাবেই ধূপগুড়ি জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে মেহতাব খুনে আফতাব গ্রেফতার হলে বাসিন্দাদের আগ্রহ আরও বাড়ে। নিজের মামাবাড়িতেই কেউ যে এভাবে ডাকাতি করতে পারে, মামাকে খুন পর্যন্ত করতে পারে, সেটা ভেবেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন আত্মীয়, পরিজন ও প্রতিবেশীরা।
তবে, মেহতাব খুনে দোষীর ফাঁসির সাজা হওয়ায় খুশি মৌমিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই ঘটনায় যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে তদন্তকারীরা তদন্তের কাজ শেষ করেছেন। যার ফলে বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা সম্ভব হয়েছে।