আদালত চত্বরেই একটি পুলিশকর্মীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই পুলিশকর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন। নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি ছুড়ে নিজেকে শেষ করেছেন তিনি। আর, তার জেরেই একাধিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নিহত ওই পুলিশকর্মীর নাম গোপালকুমার নাথ। তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের কনস্টেবল ছিলেন। ৪৫ বছরের গোপাল আদতে ছিলেন মালদার বৈষ্ণবনগরের চাঁচল মহকুমার পুকুরিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। তবে, পুলিশে চাকরি করার কারণে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বেলঘরিয়ার বসাকপাড়া এলাকায় থাকতেন তিনি।
২০২২ সাল থেকে এক বিচারকের সর্বক্ষণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন গোপাল। সেই কারণেই তাঁর কাছে একটি নাইন এমএম পিস্তল থাকত। যে পিস্তল ডিউটি আওয়ার্সের পর থানায় জমা রাখার কথা তাঁর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকার অন্তর্গত সিটি সিভিল কোর্টে পৌঁছে যেতেন তিনি। ডিউটি শেষ হলে ফিরে যেতেন বেলঘরিয়ার বাড়িতে। কিন্তু, মঙ্গলবার রাতে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি।
এদিকে, বুধবার সকালে সাফাইকর্মীরা দেখতে পান, আদালত ভবনের ঠিক নীচে, সিঁড়ির পাশেই রাখা রয়েছে একটি চেয়ার। সেই চেয়ারে গা এলিয়ে বসে রয়েছেন গোপাল। তাঁর পরনে ঘন নীল রঙের পোশাক। তাঁর মাথাটি রয়েছে শরীরের একদিকে হেলানো অবস্থায়। আর তাঁর কপালের মাঝখানে রয়েছে একটি ফুটো।
যা দেখে প্রাথমিক অনুমান করা হয়, ওই অংশে সম্ভবত রিভলবার চেপে ধরা হয়েছিল। এবং রিভলবার থেকে বের হওয়া গুলি মাথা ফুঁড়ে সোজা পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে!
কপাল ও মাথার ওই ক্ষতস্থান থেকে তখনও চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। আর সেই রক্তে ভেসে গিয়েছে আশপাশ! এই দৃশ্য দেখেই ভয় পেয়ে যান সাফাইকর্মীরা। স্থানীয় থানায় খবর পাঠানো হয়। পুলিশ এসে গোপালের নিথর দেহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গোপাল আত্মহত্যা করেছেন। খুব সম্ভবত মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, প্রশ্ন হল - আদালতের মতো একটি জায়গায় এই ঘটনা ঘটল কীভাবে? তাছাড়া, সিটি সিভিল কোর্ট বা শহরের নগর দায়রা আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্টের দূরত্ব খুব বেশি নয়। কাছেই রয়েছে সচিবালয়।
অর্থাৎ - এই এলাকার আশপাশ দিয়েই আইনজীবী, বিচারপতি ও আমলারা যাতায়াত করেন। সেখানে একজন পুলিশকর্মী কীভাবে ডিউটি আওয়ার্সের পর নিজের সার্ভিস রিভরবার নিজের কাছে রাখলেন, এবং তাঁর অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তা ভেবেই হতবাক হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। প্রশ্ন উঠছে এই এলাকায় আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার অভাব এবং নজরদারিতে গাফিলতি নিয়ে।
প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন গোপাল। সূত্রের দাবি, তিনি নাকি আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাহলে তারপরও কেন তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল? কেন ডিউটি আওয়ার্সের পর সেটি তিনি জমা না করার পরও তা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হল না? আরও বড় কথা, তিনি যে মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিলেন, তার থেকে মুক্তি পেতে তিনি কি কোনও চিকিৎসা করিয়েছিলেন?