গত মার্চে গার্ডেনরিচে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বহুতল। তাতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। ঘটনার পরেই মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তবে সেই সময় নির্বাচনী বিধি জারি থাকায় তাতে আপত্তি জানিয়েছিল বিরোধীরা। পরে কলকাতা হাইকোর্ট মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। তারপরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করে কলকাতা পুরসভা। তার জন্য মধ্যে ১২ জনের পরিবারকে ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সমন্ন হয়েছে। তবে এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি হুগলির খানাকুলের এক যুবকের পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেতে গিয়ে নিত্যদিন তাদের হয়রানি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ডে ৭৩০ পাতার চার্জশিট পেশ, খুনের অভিযোগ আনল কলকাতা পুলিশ
জানা যাচ্ছে, ওই যুবকের নাম শেখ আব্দুল্লাহ। গার্ডেনরিচের ওই বহুতল নির্মাণের কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন। আগে তিনি মুম্বইয়ে গয়না তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। গার্ডেনরিচের ওই বহুতলে রাজমিস্ত্রি কাজ করছিলেন। কিন্তু, আচমকা নির্মাণটি ভেঙে পড়ায় তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় আব্দুল্লাহর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ আবদুল্লার বিয়ে হয়েছে গত ডিসেম্বরে। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এক মহিলা সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তবে বিয়ে হলেও তাঁদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে বিয়ের কোনও নথি নেই শেখ আব্দুল্লাহর স্ত্রীর কাছে। এই অবস্থায় ক্ষতিপূরণের কথা জানতেই তিনি থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু, পুলিশ জানিয়ে দেয়, যেহেতু তাঁর কাছে পর্যাপ্ত নথি নেই তাই তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন না। উল্লেখ্য, আবদুল্লাহর মাকে ছোটবেলাতেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। এরপর তাঁর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি বিহারে রয়েছেন। ফলে ছোট থেকেই দিদিমার কাছে মানুষ হয়েছেন আব্দুল্লাহ। এই অবস্থায় তাঁর দিদিমা মাসুদা বিবি ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে প্রায় প্রতিদিনই কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
পুলিশ সূত্রে দাবি, নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের প্রথম দাবিদার হলেন মৃতের স্ত্রী। কিন্তু, নথি না থাকায় মৃতের স্ত্রী এবং দিদিমার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মৃতের স্ত্রীকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাঁর দিদিমা। এখন নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন মৃতের দিদিমা।
মাসুদা বিবি জানান, ছোট থেকেই আবদুল্লাহকে তিনি বড় করেছেন। আর নাতিকে তিনি ফিরে পাবেন না ঠিকই। কিন্তু, বাজারে অনেক ধার দেনা রয়েছে। এই টাকা দিয়ে তিনি ধার দেনা মেটাবেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু আইনি জটিলতার জন্য নবান্নের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। দ্রুতই জট কেটে যাবে এবং পরিবারের হাতে টাকা তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।